প্রয়াস: সাহড়দায় রক্তদান শিবির। ছবি: প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
একদিকে চলছে শ্রাদ্ধনুষ্ঠানের মন্ত্র উচ্চারণ, অন্য দিকে তখন বিছানায় শুয়ে রক্ত দিচ্ছেন একের পর এক যুবক-যুবতী।
শুক্রবারের দুপুরে ওই দৃশ্য দেখা গিয়েছে পাঁশকুড়া ব্লকের এক প্রত্যন্ত গ্রাম সাহড়দায়। ওই গ্রামের বাসিন্দা ভাস্করব্রত পতির বাবা ভোলানাথ পতি গত ২০ মার্চ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁর অসুস্থতার সময় রক্তের সমস্যায় পড়েছিলেন ভাস্করবাবুরা। দাবি, কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। তাই বাবা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন ভোলানাথবাবুর পরিজন। উদ্দেশ্য একটাই— ভবিষ্যতে যাতে কোনও ব্যক্তিকে রক্তের জন্য সমস্যায় পড়তে না হয়।
এ দিন সকাল থেকেই ভাস্করবাবুর বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনের পাশাপাশি ভিড় ছিল রক্তদাতাদের। দুপুর পর্যন্ত ৩৪ জন রক্তদান করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন চারজন মহিলা। তাঁরা ওই অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন। রক্তদাতাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন কালিদান গ্রামের বাসিন্দা প্রণব সাঁতরা। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী, দু’জনেই এ দিন রক্ত দান করেছেন। প্রণববাবু বলেন, ‘‘শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে রক্তদান একেবারেই ব্যতিক্রমী ঘটনা। এমন এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হতে স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই রক্তদিলাম।’’
রক্তদান শিবিরের জন্য সহযোগিতা করেছে মেদিনীপুর ক্যুইজ কেন্দ্র। ওই সংস্থার সমস্ত সদস্য এ দিন রক্তদান করেছেন। রক্তদাতাদের প্রত্যেক একটি করে নারকেল গাছ উপহার দেওয়া হয়। মেদিনীপুর ক্যুইজ কেন্দ্রের সম্পাদক মৌসম মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে রক্তদান এলাকায় একেবারে প্রথম। এখন সময় এসেছে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনের। যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে রক্তদানের মতো শিবির করা প্রয়োজন।’’
ভোলানাথবাবুর রক্তের গ্রুপ ছিল বি পজেটিভ। তমলুক সদর হাসপাতালেও এমন সহলভ্য গ্রুপের রক্ত পেতে তাঁদের সমস্যা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ভোলানাথবাবুর পরিজনেরা। এ ব্যাপারে ওই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার টি কে মাইতি এ দিন বলেন, ‘‘এ রকম একটি ঘটনা নজরে এসেছে। কোনও কারণে হয়তো সে দিন রক্ত পেতে সমস্যা হয়েছিল।’’
সমস্যা যায় হোক, আপাতত বাবার মৃত্যুর দিনে প্রতিবছর রক্তদান শিবির আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাস্করবাবু। তবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ব্যস্ত ভাস্করবাবু এ দিনের ওই আয়োজন সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর বক্তব্য, এ নিয়ে কোনও প্রচার তাঁরা চান না।
তবে ভাস্করবাবুরা প্রচার না চাইলেও গ্রামবাসীদের মনে ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছেন তিনি এবং তাঁর পরিজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy