আনিসুর রহমান।
নাটকীয় ভাবে দলীয় নির্দেশ উড়িয়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন তিনি। সাসপেন্ড হয়েছিলেন দল থেকে। একমাসের মাথায় আবার নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। এ বার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর তাঁকে অপসারিত করায় আদালতে যাওয়ার হুমকি দিলেন তিনিই।
পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে আনিসুর রহমানকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। শুক্রবারই এ কথা জানিয়েছেন তমলুকের মহকুমাশাসক শুভ্রজ্যোতি ঘোষ। ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামকে। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে আনিসুর রহমানকে অপসারণের কথা জানানো হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান হিসেবে শহিদুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।’’
আনিসুরকে অপসারণের কারণ হিসেবে পুর দফতরের ব্যাখ্যা, প্রথমত পুরপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে আইন মেনে মহকুমাশাসক বা জেলাশাসকের প্রতিনিধির সামনে শপথগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু আনিসুর সেই নিয়ম মানেনি বলে অভিযোগ।
দ্বিতীয়ত, কিছুদিন আগে আনিসুর রাজ্য পুর দফতরে চিঠি দিয়ে আবেদন করেন ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন আর্থিক ক্ষমতা তাঁকে দেওয়ার। পুর আইন অনুযায়ী, সে ক্ষমতা পুরপ্রধানের থাকার কথা নয়। পুর প্রশাসক কিম্বা নির্বাহী আধিকারিকই এই ক্ষমতার অধিকারী। ফলে এ ক্ষেত্রেও আনিসুরের বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাঁকে অপরসারণ করেছে দফতর।
একই সঙ্গে পুর আইনের ১৭-৪ ধারা বলে একমাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান হিসেবে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম খানকে নিযুক্ত করেছে দফতর। এই একমাসের মধ্যে নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন করতে হবে।
গ্রহণ: দায়িত্ব বুঝে নিয়ে শহিদুল ইসলাম খান। নিজস্ব চিত্র
যদিও নির্দেশের কথা শুনে আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘এ রকম একটি নির্দেশ এসেছে বলে আমি শুনেছি। তবে আমার কাছে চিঠি আসেনি।’’ বরং আনিসুর দাবি করেছেন তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত পুরপ্রধান এবং পুরসভার কোনও নিয়ম ভাঙেননি। দলের নির্দেশ মেনেই চলছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘দলের নির্দেশ মেনে চলেছিলাম। দলের কিছু নেতা মুখ্যমন্ত্রী ও পুর দফতরকে ভুল বুঝিয়েছে। দফতর যদি জোর করে অপসারণ করে, সে ক্ষেত্রে আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।’’
চলতি বছর আগস্টে পাঁশকুড়া পুর-নির্বাচনে ১৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭ টি জিতেছিল তৃণমূল। একটি ওয়ার্ড জিতেছিল বিজেপি। রাজ্যের শাসক দল নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও পুরপ্রধান নির্বাচনকে ঘিরে দলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসে। ৬ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনিক অফিসে পুরপ্রধান নির্বাচনে দলীয় হুইপ ভেঙে একাংশ কাউন্সিলর নন্দকুমার মিশ্রের পরিবর্তে ভোট দেন আনিসুরকে। জয়ী হন আনিসুর।
এর পরেই তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব দলবিরোধী কাজের অভিযোগ আনিসুরকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন। এরপর ঠিক একমাসের মাথায় গত ৬ অক্টোবর পুরপ্রধান আনিসুর তমলুকের মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও সরকারি নিয়ম মেনে বোর্ড মিটিং ডেকে পদত্যাগপত্র অনুমোদিত না হওয়ায় পুরপ্রধান পদে থেকে যান আনিসুর।
শুক্রবার যাঁকে ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই শহিদুল ইসলাম খান নন্দকুমার মিশ্রের অনুগামী হিসাবে পরিচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy