প্রতীকী ছবি।
জঙ্গলমহলে অশান্তি পর্বে বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে থাকত চাঁদড়ার আকাশ। মাঝে মধ্যে গুলির আওয়াজ শোনা যেত। জেলা পুলিশের উদ্যোগে সেই চাঁদড়াতেই চালু হল স্থানীয় ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের নাম ‘সাফল্য’।
বুধবার শিক্ষক দিবসে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনে এসে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলছিলেন, “অনেকের মনে বিশ্বাস থাকে না। মনে বিশ্বাস না থাকার ফলে অনেকে চেষ্টাই করেন না। তাই সফল হন না। চেষ্টা থাকলে সফল হবেনই।” এলাকার ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আপনারা আসুন। আমরা একটা রাস্তা দেখানোর চেষ্টা করেছি। কাজটা আপনাদেরকেই করতে হবে। সব পরীক্ষার জন্যই আপনাদের তৈরি করা হবে এখানে।”
আপাতত এই কেন্দ্রে শালবনি এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকের ৪৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সপ্তাহে দু’টি করে ক্লাস হবে। শনি এবং রবিবার। ক্লাস হবে দু’ঘণ্টার। ক্লাস নেবেন পেশাদার শিক্ষকেরা। যাঁরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়ান। আপাতত ৬ জন শিক্ষককে এই কেন্দ্রে নিযুক্তও করা হয়েছে। উদ্বোধনে ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শচীন মক্কর, ডেপুটি পুলিশ সুপার দেবশ্রী সান্যাল প্রমুখ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আশ্বাস, “এই কেন্দ্রে পড়ানোর সঙ্গে আমরাও যুক্ত থাকব।”
পুলিশের উদ্যোগে খুশি এলাকার ছেলেমেয়েরা। যারা চাকরি খুঁজছেন। চাঁদড়ায় যেখানে সিআরপি-র ক্যাম্প ছিল, সেখানেই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে।
প্রশিক্ষণ নিতে আসা শেখর দণ্ডপাট, রাজেশ রহমানদের কথায়, “এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।” আর এক যুবক জমা মান্ডির কথায়, “এরফলে নিশ্চিত ভাবেই এলাকার ছেলেমেয়েরা উপকৃত হবেন।” জমা এ বার পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় বসবেন।
স্থানীয়দের এ দিন নিজের উপর বিশ্বাস রাখার পরামর্শ দেন জেলা পুলিশ সুপার। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “মনে করতে পারেন, বড় ভাই হিসেবেই আপনাদের এই পরামর্শ দিচ্ছি। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। গ্রামেগঞ্জে পড়েছি, আমরা করতে পারব না, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অনেকে এই এলাকায় থেকেও সফল হয়েছেন।” তাঁর কথায়, “এই প্রশিক্ষণের জন্য কেন এই এলাকা বেছে নিয়েছি? এটা নয় যে এটা নকশাল এলাকা রয়েছে বলে। আমরা এই এলাকা বেছে নিয়েছি কারণ এই এলাকার অনেকের মেদিনীপুরে গিয়ে কোচিং নেওয়া সম্ভব নয়। সেই সামর্থ্য নেই।”
পুলিশ সুপারকে বলতে শোনা যায়, “আমরাও অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এখানে আসিনি। আপনাদের মতোই গ্রামেগঞ্জের ছেলে। মনে বিশ্বাস ছিল। ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল। শিক্ষকদের আশীর্বাদ ছিল। আমরা এগিয়েছি। সফল হয়েছি। আপনারাও সফল হবেন।”
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা ছেলেমেয়েরা প্রয়োজনীয় বইপত্র এই কেন্দ্র থেকেই পাবেন। এসএসসি, পিএসসি, ডব্লুবিসিএস-সহ বিভিন্ন রকম সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এখানে। গ্রামেগঞ্জে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী রয়েছেন যারা অর্থের অভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোচিং সেন্টারগুলোয় যেতে পারেন না। সেই জন্যই এই উদ্যোগ। সঠিক ভাবে যদি প্রশিক্ষণ নেওয়া হয় তাহলে চাকরি মিলবেই।
জেলা পুলিশ সুপার বলছিলেন, “চেষ্টা করতে হবে। ভাল ভাবে পরিশ্রম করতে হবে। মন দিয়ে পড়তে হবে। চেষ্টা করলে সফল নিশ্চয়ই হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy