Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Drug Addiction

ঘুমের বড়ি, সিরাপের টানেই স্কুল কামাই

ঝাড়গ্রাম শহরের কিশোর-যুবকদের একটা বড় অংশ বেআইনি ওষুধের নেশায় আসক্ত। অভিযোগ, শহরের কিছু ওষুধের দোকান নির্দিষ্ট কিছু ঘুমের বড়ি ও কাশির সিরাপ  চড়া দামে বিক্রি করছে।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৪
Share: Save:

বইয়ের ব্যাগ পিঠে নিয়ে রোজই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় বছর ষোলোর ছাত্রটি। কিন্তু ফেরে দেরি করে। মা জিজ্ঞেস করলে সে কোনও দিন জানায়, খেলতে গিয়ে দেরি হয়েছে। কোনও দিন আবার বলে, বিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য ফিরতে দেরি হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ দিনই ছেলের চোখে ঘুমঘুম ভাব থাকে। অভিভাবকদের সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুল যাচ্ছে বলে রোজ বেরোলেও সে বেশিরভাগ দিনই স্কুলে যায় না।

তাহলে কোথায় যায় সে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ছাত্রটি কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে গোপন আড্ডায় গিয়ে ঘুমের বড়ি নয়তো কাশির সিরাপ খেয়ে নেশা করে। ছেলের নেশা কাটাতে কলকাতায় নিয়ে চিকিৎসক দেখান অভিভাবকেরা। এখন তার কাউন্সিলিং চলছে। এক্ষেত্রে বিষয়টি ধরা গেলেও সবক্ষেত্রে যায় না। ফলে সহজ সমাধানও হয় না।

ঝাড়গ্রাম শহরের কিশোর-যুবকদের একটা বড় অংশ বেআইনি ওষুধের নেশায় আসক্ত। অভিযোগ, শহরের কিছু ওষুধের দোকান নির্দিষ্ট কিছু ঘুমের বড়ি ও কাশির সিরাপ চড়া দামে বিক্রি করছে। সেই বড়ি ও সিরাপ মিশিয়ে নেশার মৌতাতে বিপন্ন হয়ে উঠছে কচি-কিশোর প্রাণ। ঝাড়গ্রাম শহরে ৩৫-৪০টি ওষুধ দোকান রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, উপযুক্ত প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের বড়ি ও নির্দিষ্ট কিছু কাশির সিরাপ বিক্রি করা যায় না। যদিও কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী সেই কাজটাই করছেন বলে অভিযোগ। নিয়মিত এই ওষুধ ও সিরাপ খেলে শরীরে নানা সমস্যাও দেখা যেতে পারে। ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘কমবয়সীরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ঘুমের বড়ি ও সিরাপ খেলে তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’

বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ঝাড়গ্রাম শাখার সহ সভাপতি প্রফুল্ল দে বলেন, ‘‘কিছু নির্দিষ্ট বড়ি ও সিরাপ প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেওয়া যায় না। সেই ওষুধ বিক্রি করতে গেলে কাকে দেওয়া হচ্ছে সেই প্রমাণও রাখতে হয়। দোকানের সিলমোহর দিয়ে কতগুলি ওষুধ দেওয়া হল সেই তথ্যও প্রেসক্রিপশনে লিখে দিতে হয়। সেইসব নিয়ম না মেনে ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে কি-না খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

ঝাড়গ্রাম জেলায় ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের সহ-অধিকর্তার দফতর থেকে অরণ্যশহর-সহ জেলার ওষুধ দোকানগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের সহ-অধিকর্তা তরুণকান্তি পাল অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

কী বলছে স্কুলগুলি? ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক নিরঞ্জন মান্না বলেন, ‘‘টিফিনের পরে ষষ্ঠ পিরিয়ডে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির প্রতিটি ক্লাসে ফের রোল কল করা হয়। একাদশ-দ্বাদশে প্রতি পিরিয়ডে রোল কল করা হয়। কেউ প্রথমে উপস্থিত থেকে পরে অনুপস্থিত হলে অভিভাবকদের জানানো হয়। স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগও রাখতে হবে। না হলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Addiction Sleeping Pill Cough Syrup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE