ময়নায় শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে তুলেছিলেন গ্রামবাসী। তাঁকে গ্রেফতারের দাবি ক্রমশ জোরালো হলেও হাফিজাকে পলাতক বলে জানিয়েছিলেন পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অথচ পলাতক সেই দলীয় নেত্রীকেই পুলিশ আটক করল সোমবার ময়নায় শুভেন্দু জনসভা শুরুর আগে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ল না বিজেপি।
ময়নায় নিখোঁজ যুবক সোমনাথ বেরাকে খুনের ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত শেখ আনসারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার আগে তাঁকে আড়াল করার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজা খাতুনকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। চাপে পড়ে পুলিশ আনসারকে গ্রেফতারের পর সোমনাথকে খুনের কথা স্বীকার করে সে।
কিন্তু সোমবার ময়নায় পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর জনসভার আগে সেই হাফিজাকে আটক করল পুলিশ। এদিন জনসভা থেকে শুভেন্দুবাবু নিহত সোমনাথের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তাঁর পরিবারকে চাকরি ও আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘সোমনাথের পরিবার যদি চান, তবে আমরা তাঁদের কন্ট্রাক্টচুয়াল (চুক্তিভিত্তিক) চাকরির ব্যবস্থা করব ও অর্থ সাহায্য করব।’’ ঘটনার সঙ্গে ইতিমধ্যেই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের নাম জড়ালেও মন্ত্রীর দাবি, ‘‘এটি অরাজনৈতিক ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
মন্ত্রীর মুখে নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি আর পুলিশের তদন্তের কথায় কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের অভিযোগ, ‘‘এলাকার মানুষের ক্ষোভের কথা মাথায় রেখে তাদের দৃষ্টি ঘোরাতেই খুনের ঘটনায় জড়িত পঞ্চায়েত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে চাকরি ও অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শুভেন্দুবাবু। আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচাতে মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে।’’
বিজেপির দাবি, তৃণমূল সদস্যকে আটক করে আসলে শাসক দল তদন্তে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে চাইছে। অথচ তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে যখন সরব হয়েছিলেন এলাকার মানুষ তখন তাঁকে পলাতক বলে জানিয়েছিল শাসক দলের পুলিশ। আর এ দিন মন্ত্রী আসার ঠিক আগেই তাঁর খোঁজ পেয়ে গেল! ওই পঞ্চায়েত সদস্য এই খুনের ঘটনায় জড়িত না থাকলে পলাতক ছিলেন কেন?
যদিও এদিন সভায় ময়নার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাজাহান দাবি করেন, ‘‘রাজনীতির রং না দেখে সোমনাথ বেরার মৃত্যুর ঘটনায় হাফিজাকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনায় আর যারাই জড়িত থাকুক না কেন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’
এলাকাবাসীর অবশ্য অভিযোগ, সোমনাথ নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানোর সময়েও কোনও তৃণমূল নেতাকে পাশে পাওয়া যায়নি। খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই ব্লকের তৃণমূল নেতারা সোমনাথের পরিবারের পাশে থাকার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। হাফিজার ভূমিকায় বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ বুঝেই তাঁকে গ্রেফতারে সায় দেন।
তবে ময়নার বাকচায় লাগাতার গোলামালের জন্য এ দিন বিজেপিকে দায়ী করে হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘আমি লক্ষ্মণ শেঠ, সুশান্ত ঘোষকে জব্দ করা লোক। আমি কিষাণজিকে আউট করা লোক। অধীর চৌধুরীকে সাইন বোর্ড করে দেওয়া লোক। আমাকে ঘাঁটাবেন না।’’ এর পরেই মন্ত্রী বলেন, ‘‘ব্রিগেড সমাবেশের পরেই বাকচা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy