সভায় শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিক, নিরাপত্তারক্ষীদের মারধরের ঘটনায় গ্রেফতারের পরে, দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পরেও তৃণমূলের প্রতিই আস্থা জানিয়েছিলেন কোলাঘাটের দাপুটে নেতা দিবাকর জানা। বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীই আমার নেতা।’’
শুভেন্দু অবশ্য দিবাকরের এলাকায় সভা করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি দিবাকরের পাশে নেই। শনিবার শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের নোনাকুড়িবাজারের নজরুল মঞ্চে ব্লক তৃণমূলের বর্ধিত সভা দিবাকরের নাম না করেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি ও আদর্শ মেনে না চললে দল তাঁর পাশে থাকবে না। কেউ ভুল করলে তাঁকে ঝেড়ে ফেলা হবে।’’ পরক্ষণেই শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘তবে কেউ ভুল করলে দলীয় পদ্ধতি মেনে সংশোধন হলে তাঁকে ফের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।’’ তৃণমূল আহ্বায়ক হিসেবে শরৎ মেট্যা আপাতত ব্লকে সাংগঠনিক কাজ চালাবেন বলেও এ দিন জানিয়েছেন শুভেন্দু। আর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা শ্রমিকদের মধ্যে থেকেই বাছাই করা হবে। আগামী ২ মার্চ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে সভার কর্মসূচিও ঘোষণা করেন শুভেন্দু।
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ছিলেন দিবাকর। সঙ্গে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। জোড়া পদে থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গোটা ব্লকে সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করতেন দিবাকর। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘটনার পরে দল ও শ্রমিক সংগঠনের পদ থেকে দিবাকরকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। এরপর সংগঠনের রাশ কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এ দিন যদিও শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই ব্লকে সংগঠন, পঞ্চায়েত তথা ট্রেড ইউনিয়নের যে ছন্দ ও সুর বেসুরো হয়ে গিয়েছিল, তা ঠিক করার কথা আমি অনেক আগেই ভেবেছিলাম। এই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।’’
দিবাকর যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবসাও চালাতেন তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মণ। সে দিকেও ইঙ্গিত করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘থার্মাল পাওয়ারের ভিতরে ব্যবসা করবেন আর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হবেন, এটা পারবেন না।’’ শুভেন্দুর পরামর্শ, ‘‘দলের কর্মীরা নিশ্চিতভাবে কাজ করবেন। তবে যেখানে আপনি নেতৃত্ব দেবেন সেখানে আপনার ভাই যদি মনরেগা (একশো একশো দিনের কাজের প্রকল্প) মাল সরবরাহ করে তাহলে সেটা ভাল হবে না।’’
দিবাকরের নাম না নিয়ে শুভেন্দু আরও জুড়েছেন, ‘‘অনেকেই বলে এই ব্লকে দলকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি বলি, নন্দীগ্রাম গণআন্দোলন না হলে আর ২০০৮ সালে এসইউসির বন্ধুরা পাশে না থাকলে এই ব্লকে আপনার জেতার ক্ষমতা ছিল না। বিডিও অফিসে আটকে দিয়ে পঞ্চায়েত জেতা আর বিধানসভা ও লোকসভায় হারা, দু’টো এক সঙ্গে চলবে না।’’
শুভেন্দুর এই কড়া অবস্থানকে কটাক্ষ করে বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘দিবাকরকে এতদিন শুভেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ নেতা বলেই সবাই জানতেন। তাই দিবাকর এতদিন কী করেছেন তা শুভেন্দুবাবুর অজানা নয়। পরিস্থিতি বুঝেই দিবাকরকে নিয়ে এখন এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy