Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Suvendu Adhikari

সিঁড়ি ভেঙেই উঠেছি: শুভেন্দু

তৃণমূলে শুভেন্দুর বর্তমান অবস্থান নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন চলছে। শোনা যাচ্ছে আসন্ন দলত্যাগের কথাও।

নতশির: শনিবার নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

নতশির: শনিবার নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০০:৫০
Share: Save:

প্যারাসুটেও নামেননি, লিফটেও ওঠেননি। সিঁড়ি ভেঙেছেন, ছাত্রাবস্থা-কলেজ জীবন থেকে ধাপে ধাপে পৌঁছেছেন বর্তমান রাজনীতির আঙিনায়। এবং আজও পাল্টাননি তিনি।

নন্দীগ্রামের সীতানন্দ কলেজের মাঠে শনিবার বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে এক এক করে নিজের স্মৃতির ডালি উপুড় করে দিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা তৃণমূলের দাপুটে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ইঙ্গিতে বোঝালেন নিজের রাজনৈতিক অবস্থানও। তাঁর স্মৃতিচারণায় এক বারের জন্যও এল না দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা দল তৃণমূলের নাম। উল্টে সতীশ সামন্ত, সুশীল ধাড়া, অজয় মুখোপাধ্যায়দের উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করলেন শুভেন্দু। তাঁর কথা শুনে হাততালির ঝড় বইল।

তৃণমূলে শুভেন্দুর বর্তমান অবস্থান নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন চলছে। শোনা যাচ্ছে আসন্ন দলত্যাগের কথাও। এই পরিস্থিতিতে এ দিন বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে নিজের খাসতালুক নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তৃতা শুনতে ভিড়ও হয়েছিল ভাল। বিগত কয়েক বছরে যেমন ছিলেন, এখনও তেমন রয়েছেন কি না, তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের কাছে নিজেই জানতে চান শুভেন্দু। জবাব আসে— হ্যাঁ। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, গত কয়েক বছর ধরে এবং আমপান পরবর্তী পর্যায়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে যেমন ভুরিভুরি দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে, বহু নেতার আঙুল ফুলে কলাগাছ অবস্থা প্রকাশ্যে এসেছে, তা থেকে তিনি কতটা আলাদা তা বোঝাতেই শুভেন্দু এ দিন ওই মন্তব্য করেছেন।

এ দিন শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘কেন বিয়ে করিনি!... সতীশবাবু, সুশীলবাবু, অজয়বাবু বলেই গিয়েছিলেন তাঁরা অকৃতদার ছিলেন মানুষের জন্য। কোনও পিছুটান যেন না থাকে। ছোট্ট পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। বৃহত্তর পরিবার করব।’’ এর পরেই মন্ত্রী চলে গিয়েছেন নিজের রাজনৈতিক জীবনের প্রসঙ্গে। ১৯৮৭ সালে কলেজে ঢোকা থেকে ১৯৯৫ সালে অবিভক্ত কংগ্রেসের কাউন্সিলার হওয়া সবই উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠেছি।’’ কিন্তু যে তৃণমূল এবং জমি আন্দোলন থেকে তাঁর উত্থান, সেই বিষয় এড়িয়েই গিয়েছেন শুভেন্দু। যা তাঁর দলত্যাগের জল্পনাকে আরও জোরদার করছে বলে ব্যাখ্যা রাজনৈতিক মহলের।

এ দিন শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ছোটলোকদের দিয়ে বাজে কথা বলিয়ে ভাবছে আমি উত্তর দেবে। কুকুর কামড়ালে কি মানুষ তাকে কামড়ায়!’’ উল্লেখ্য, শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে দু’দিন আগেই আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দিঘায় এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন আওড়ে কটাক্ষ করেছিলেন। এ দিন শুভেন্দুর এই মন্তব্য সেই কটাক্ষেরই জবাব বলে মনে করছেন রাজনীতির বিশ্লেষকেরা।

শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে বিঁধতে ছাড়েননি জেলা রাজনীতিতে অধিকারীদের ‘প্রতিপক্ষ’ বলে পরিচিত রামনগরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অখিল গিরি। তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘অধিকারী পরিবার তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আসেনি। যখন তৃণমূলে এসেছেন তখন সাজানো বাগানে এসেছেন। দলে ওঁকে সিঁড়ি ভাঙতে হয়নি। আর ২০০৪ সালে অধিকারী পরিবারের সম্পত্তি, ২০২০ সালের সম্পত্তিতে আকাশ-পাতাল ফারাক। দল ওঁর পরিবারকে সর্বস্ব দিয়েছে। এখন সেই দলের সঙ্গে উনি বেইমানি করছেন।’’

আগামী ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে ‘রক্তাক্ত সূর্যোদয়ে’র বর্ষপূর্তি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। গোকুলনগর গোবিন্দ জিউ হাইস্কুল মাঠে সমাবেশও করবেন। রাজ্যে পালাবদলে আগে ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর ছিল তৃণমূলের নন্দীগ্রামের বুকে শেষ আন্দোলন। শুভেন্দুকে নিয়ে যাবতীয় জল্পনার মধ্যে এ বার সমাবেশের ঘোষণা যথেষ্টই ইঙ্গিতপূর্ণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari TMC Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE