Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জীবন বাজি/ ১

কম পুঁজিতেই লাভ, বিপদ জেনেও ঝুঁকি

উৎসবের মরসুম আসতেই বেড়েছে আতসবাজির চাহিদা। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে তৈরি হয় ওই সব আতসবাজি। দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তাতেও কি হুঁশ ফিরেছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। উৎসবের মরসুম আসতেই বেড়েছে আতসবাজির চাহিদা। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে তৈরি হয় ওই সব আতসবাজি। দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তাতেও কি হুঁশ ফিরেছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

বাড়িতেই আতসবাজি তৈরির সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতেই আতসবাজি তৈরির সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র

গোপাল পাত্র
পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ষোলো বছর আগে এক পুজোর দিন বারুদের স্তূপে আগুন লেগে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পটাশপুরের গঙ্গাসাগর গ্রাম। তাতে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন সাত জন। গঙ্গা পুজোর রাতের সেই ঘটনার দাগ এত দিন পরেও থেকে গিয়েছে আগুন লাগা বাড়িটির চৌকাঠে। ওই বিভীষিকার স্মৃতি থেকে এলাকার মানুষেরা সচেতন হলেও শিক্ষা নেয়নি গোটা পটাশপুর। তার ফল স্বরূপ এখনও রমরমিয়ে চলছে বেআইনি ভাবে আতসবাজি তৈরির কাজ।

বাজির নেশায় এখনও বুঁদ হয়ে রয়েছেন কারবারিরা। এগরা মহকুমার গোকুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, আড়গোয়াল, সামন্তখণ্ড, পটাশপুর, মথুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে কুটির শিল্পের আকারে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ আতসবাজি থেকে রংবাতি। স্থানীয় সূত্রের খবর, শুধু পটাশপুরেই ৫০ থেকে ৬০টি পরিবারের ২৫০ জনের বেশি সদস্য ওই কাজে যুক্ত রয়েছেন। দোদোমা, রকেট, গেছো বোমার মতো একাধিক ২০০ ডেসিবেল শব্দ সম্পন্ন বাজিও তৈরি হয়।

সাধারণত, পূর্ব মেদিনীপুরে গণেশ পুজো বা বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই সময় থেকেই কলকাতার বাজার থেকে কাঁচামাল এনে প্রস্তত করা হয় বাজির মশলা। তাতে প্রয়োজন মত রাসায়নিক মিশিয়ে বাজির শব্দ নির্ধারণ করা হয়। বাড়ির বড়ো থেকে ছোটরা সবাই হাত লাগান এই কাজে। মাঝেমধ্যে ঘটে দুর্ঘটনাও। যেমনটা ঘটেছিল ২০০২ সালে গঙ্গাসাগর গ্রামের সার্বজনীন গঙ্গাপুজোয় বেআইনি আতসবাজির প্রতিযোগিতায়।

পুজোর সন্ধ্যায় গঙ্গাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘরের মধ্যে প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি সারছিলেন বাজি কারবারিরা। অদূরেই চলছিল প্রতিযোগিতা। সেখান থেকে আগুনের ফুলকি বারুদে পড়ে বিস্ফোরণ হয়। মৃত্যু হয় সাতজনের। সে সময় অভিযোগ উঠেছিল, তিনজনের দেহ উদ্ধার হলেও বাকি চারজনের দেহ সরিয়ে ফেলেছিলেন স্থানীয়েরা। ঘটনায় স্বজন হারানো পরিবারের কেউই আজ বাজি তৈরি করেন না। তবুও অন্যেরা ওই ‘নেশা’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

কিন্তু বিপদ জেনেও কীসের লোভে এই ব্যবসা করছেন কারবারিরা?

নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এক আসতবাজি নির্মাতার কথায়, ‘‘বাজি তৈরিতে কম টাকা বিনিয়োগ করে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। একটি নিষিদ্ধ শব্দ বাজি বানাতে খরচ হয় আট টাকার মতো। আর বাজারে সেই বাজি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা দামে। যে বাজির যত বেশি আওয়াজ, তা তৈরি করতে তত বেশি ঝুঁকি থাকে।’’ ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘নির্জন স্থানে গিয়ে ওই বাজি বানানো হয়। তবে বিস্ফোরণের ভয় থেকেই যায়। গণেশ চতুর্থী থেকে বাজির চাহিদা বেড়ে যায়। ওড়িশাতেও মাল পাঠানো হয়। তবে তার জন্য পুলিশকে মাসহারা দিতে হয়। আমরা জানি এটা বেআইনি, তবুও জীবিকার জন্য এটা করতে হয়।’’

স্থানীয় পুলিশের অবশ্য দাবি, এ নিয়ে নিয়ম করে অভিযান চালানো হয়। বেআইনি বাজি উদ্ধারের পাশাপাশি একাধিক বেআইনি বাজি কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুজোর মরসুম এসেছে, খুব শীঘ্রই আবারও অভিযান শুরু হবে। গোটা ব্যাপারে কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘বেআইনি বাজি তৈরির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। পুজোর মরসুমে গোপনে কোথাও বাজি তৈরি বা মজুত করা হচ্ছে কি না, তাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশকে মাসোহারা দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকে, তো তদন্ত করে দেখা হবে।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firecrackers Illegal Fireworks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE