জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
ওদের পরিবারে জন্মদিন পালনের চল নেই। অনেকের কাছে জন্মদিন পালন মানে বিলাসিতা। দু’টি সরকারি স্কুলের এমনই ২৩ জন কচিকাঁচাদের নিয়ে ‘গণ-জন্মদিন’ পালন করলেন শিক্ষকরা। ওই পড়ুয়াদের জন্মদিনে আমন্ত্রিত ছিলেন স্কুলের বাকি শ’খানেক ছাত্রছাত্রীরাও। এসেছিলেন কয়েকজন প্রাক্তনীও।
ঝাড়গ্রামের আগুইবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমারী গ্রামের একপ্রান্তে জঙ্গল-লাগোয়া মাঠে হল এই বার্থ-ডে পার্টির অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির মূল ভাবনায় ছিলেন কুমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন কিলোমিটার খানেক দূরের সোনামুখী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। কুমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বরূপচন্দ্র বিশুই ও সোনামুখী প্রাথমিক বিদ্যলয়ের টিচার-ইনচার্জ কমল সিংহ জানালেন, তাঁদের স্কুলের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীরা দরিদ্র আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণির। ওই সব পড়ুয়াদের জন্মদিন পালন হয় না। সেই কারণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের সকলের জন্মদিন একসঙ্গে পালন করা হবে। দু’টি স্কুলের শিক্ষকরাই নিজেরা টাকা দিয়ে তহবিল গড়ে এই অনুষ্ঠান করেছেন।
স্বরূপবাবুর স্কুলে প্রতি মাসের শেষ দিনে সেই মাসে যাদের জন্ম, তাদের জন্মদিন পালন করা হয় স্কুলের উদ্যোগে। কিন্তু এ বার অন্যরকম ভাবনা কেন? স্বরূপবাবুর জবাব, আমাদের স্কুলের ১৯ জন পড়ুয়ার জন্ম হয়েছে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে। শিশুদের আনন্দদানের উদ্দেশ্যেই এমন আয়েজন। সোনামুখী স্কুলের কর্তৃপক্ষও কুমারী স্কুলের এমন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগ্রহী হন। তাদের স্কুলের চার জন পড়ুয়ার জন্ম হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে।
এ দিন দু’টি স্কুলের শিক্ষকদের উদ্যোগে ২৩ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য একটি বড় বার্থডে কেক নিয়ে আসা হয়েছিল ঝাড়গ্রামের একটি অভিজাত দোকান থেকে। ২৩ জন পড়ুয়া একসঙ্গে কেক কাটল। শিক্ষকরা তখন কোরাসে ‘হার্পি ব্যার্থ ডে টু অল আওয়ার চাইল্ড’ গাইছেন। কেক খাওয়ার পরে জন্মদিনের পার্টি। রান্না করলেন গ্রামের মহিলারা। শিক্ষকদের টাকায় ভাত, ডাল, পাঁচমেশালি তরকারি, মুরগির মাংস, মাছের কালিয়া, টোম্যাটো-খেজুরের চাটনি, পাঁপড়, নলেন গুড়ের রসগোল্লা। পাত পেড়ে চেটেপুটে খেয়ে রীতিমতো আপ্লুত খুশি পাণ্ডে, সবিতা বাগাল, সাগুন সরেন, দেবাশিস দলাই, অমিত হাঁসদার মতো বার্থ-ডে বয়, বার্থ-ডে গার্লরা। জন্মদিনের পার্টিতে হাজির ছিল দু’টি স্কুলের বাকি পড়ুয়ারাও। এসেছিল কিছু প্রাক্তনীও। পড়ুয়ারা গান গেয়ে, নানা ধরনের খেলাধুলোয় মেতে ওঠে।
ঝাড়গ্রামের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষক-পড়ুয়ার মেল বন্ধনে সহায়ক হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy