
আঁধার পথে লুকিয়ে বিপদ
তেলঙ্গানার ঘটনায় প্রশ্নে জেলার মহিলাদের নিরাপত্তা

দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর ফের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা। হায়দরাবাদে এক পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশ জুড়ে। দোষীদের চরম শাস্তি চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব নেটিজেনরাও। ঘটনার পর দেশে মহিলাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে ফের বড়সড় প্রশ্নের মুখে।
হায়দরাবাদ থেকে অনেক দূরে থাকলেও তরুণী পশু চিকিৎসকের উপর এমন পরিণতিতে নিজের উপর অত্যাচারের ঘটনা কথা মনে পড়ে গিয়েছে কোলাঘাটের পুলশিটার নিযার্তিতার পরিবারের। শেষ পর্যন্ত কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয় নির্যাতিতা। বার বার মেয়েদের উপর এমন অত্যাচারে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার পরিবার। প্রশ্ন আর এক নিযার্তিতা পাঁশুকুড়ার মৃত প্রেরণার পরিবারেরও।
ঠিক এক বছর আগের ঘটনা। পাঁশকুড়ার মধুসূদনবাড়ের মেধাবী ছাত্রী প্রেরণা মাইতিকে চলন্ত সাইকেল থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সমীর সাহু নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। সাইকেলের ব্রেক প্রেরণার নিম্নাঙ্গে ঢুকে যাওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান প্রেরণা। সমীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন অবশ্য সে জামিনে মুক্ত। গত অগস্ট মাসের শেষ দিকে কোলাঘাটের পুলশিটা এলাকায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তার প্রেমিক-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে। অপমানে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। মৃত ওই স্কুলছাত্রীর প্রেমিক সহ ছ’জন গ্রেফতার হয়। হায়দরাবাদে তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গোটা দেশের পাশাপাশি আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে জেলার মহিলাদের মনেও।
কতটা নিরাপদ শহর পাঁশকুড়া?
শহরবাসীর অভিযোগ পাঁশকুড়া শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। অভিযোগ সন্ধ্যা নামলেই শহরের রাস্তাঘাট চলে যায় সমাজবিরোধীদের দখলে। শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে বিকল পথবাতির সুযোগ নিয়ে রাস্তাতেই চলে চোলাই, জুয়া ও সাট্টার আসর। শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে সন্ধ্যার পর একা মহিলাদের পক্ষে রাস্তায় বেরোনো আতঙ্কের বলে দাবি শহরবাসীর একাংশের। শহরের এক কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘‘পাঁশকুড়ার বুকে দিন দিন দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’
পাঁশকুড়ার নারী নিগ্রহ বিরোধী নাগরিক কমিটির সম্পাদক শ্রাবন্তী মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রেরণা মাইতিকে খুন করা হয়েছিল দিনের বেলায়। অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত হয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নেশার সামগ্রী। এই ঘটনাই বুঝিয়ে দেয় পাঁশকুড়া শহরে মহিলাদের সুরক্ষা কতখানি!’’এই বিষয়ে পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘শহরের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মোট ৬২টি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে পুরসভা। হায়দরাদের ঘটনার পর শহরে পুলিশি টহল বাড়ানোর ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব।’’
কোলাঘাটের পুলশিটা এলাকার যে জায়গায় দশম শ্রেণির ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল, সেই নির্জন জায়গায় জঙ্গল সাফ করে পথবাতি লাগানোর কথা দিয়েছিল প্রশাসন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও কাজই হয়নি। এখনও সন্ধ্যার পর ওই এলাকা চলে যায় সমাজবিরোধীদের দখলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ এত বড় ঘটনার পরেও এলাকায় দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য একটুকু কমেনি। এই বিষয়ে কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই জায়গায় পথবাতি লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত পথবাতি লাগানোর ।’’
অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ার জন্য অনেকে রাজ্য সরকারের ঢালাও মদের লাইসেন্স প্রদানকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মদ ও মাদক দ্রব্য বিরোধী কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘সরকার ঢালাও মদের লাইসেন্স দিচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের কারবার। প্রশাসনিক নজরদারি নেই। নতুন প্রজন্ম নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্যই এই ধরনের কার্যকলাপ বাড়ছে।’’