Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নেকড়ের কামড়ে বাড়ছে আশঙ্কা

ধীরেন্দ্রনাথের দুই ভুরুর মাঝের কপাল এবং বাঁ গালে কামড় দিয়ে মাংস খুবলে নিয়েছিল নেকড়ে। ধীরেন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরেই পড়শি তরুণী মালিনী মাহাতো বাড়ির উঠোনের খাটিয়ায় বসেছিলেন। মালিনীর ঠোঁট কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিল নেকড়ে।

মালিনী মাহাতো এবং ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো।

মালিনী মাহাতো এবং ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৪
Share: Save:

শিমূলডাঙা গ্রামে মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসেছিলেন বছর ছেচল্লিশের ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো। তাঁর দুই খুদে মেয়ে শেফালি আর নীলু বাবার গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। ধীরেন্দ্রনাথের দুই ভুরুর মাঝের কপাল এবং বাঁ গালে কামড় দিয়ে মাংস খুবলে নিয়েছিল নেকড়ে। ধীরেন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরেই পড়শি তরুণী মালিনী মাহাতো বাড়ির উঠোনের খাটিয়ায় বসেছিলেন। মালিনীর ঠোঁট কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিল নেকড়ে। গলাতেও রয়েছে ক্ষতের দাগ।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের শিমূলডাঙা-সহ সাতটি গ্রামে হানা দিয়ে সব মিলিয়ে ১০ জনকে কামড়েছিল একটি নেকড়ে। সে দিন বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়েছিলেন মালিনী। সেখানেই তার উপরে হামলা করে ওই নেকড়েটি। সম্পর্কিত বৌমা মালিনীকে বাঁচাতে ছুটে যান ধীরেন্দ্রনাথ। তখন মালিনীকে ছেড়ে ধীরেন্দ্রনাথের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নেকড়েটি। কেঁউদিশোল গ্রামের বাসিন্দারা ওই নেকড়েটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় ওই নেকড়ের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরে মালিনী মাহাতোকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছিল। আহত ৩ মহিলা-সহ ৫ জনকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা কিছু দিন পরে ছাড়া পেয়ে যান। এরপরেই আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছে। কারণ বাড়ি ফেরার পরে ফের অসুস্থ হয়ে ২ জন আহতের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘৃতখাম গ্রামের বৃদ্ধা সুশীলা মাহাতো ফের অসুস্থ হলে তাঁকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। রবিবার সেখানেই সুশীলার মৃত্যু হয়। এর পরে বাকি আহতদের ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায় বন দফতর। সেখানে ফের শারীরিক পরীক্ষা হয় তাঁদের। তখন জারুলিয়া গ্রামের বৃদ্ধ ভূষণচন্দ্র মাহাতোর শরীরে জলাতঙ্কের উপসর্গ পাওয়া যায়। তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার তাঁকে বেলাঘাটা আইডি হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। সেখানে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ভূষণচন্দ্রের।

প্রাণিচিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হামলাকারী নেকড়েটি রেবিসের (সিলভিয়ান সাইকেল অফ রেবিস) বাহক ছিল। বন্য জন্তুর কামড়ের তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। তার মধ্যে ‘ক্যাটাগরি থ্রি’ হল সবচেয়ে আশঙ্কাজনক কামড়। এক্ষেত্রে মুখ, মাথা, কপাল, গলা, ঘাড়ে বন্যজন্তু গভীর কামড় দেয়। এ ক্ষেত্রে রেবিসের জীবাণু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কামড় যদি ‘ক্যাটাগরি থ্রি’ পর্যায়ের হয় তাহলে অনেক সময়ে জীবনদায়ী চিকিৎসাও ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

অভিযোগ, আহতদের যখন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন এআরভি (অ্যান্টি রেবিস ভ্যাকসিন) মজুত ছিল না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে সেই প্রতিষেধক কিনে আনে। তাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদকের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘আহতদের সাধ্যমতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, নেকড়ের কামড়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ‘ক্যাটাগরি থ্রি বাইট’ ছিল। ময়না তদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wolf Wild Life Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE