সন্তানহারা বাবার কান্নায় থমকে দাঁড়ালেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব। একান্তে ডেকে নিয়ে গেলেন তাঁকে, শুনলেন অভিযোগ। নিজে হাতে নিলেন অভিযোগপত্র। তারপর আশ্বাস দিলেন, “মৃত সন্তানকে তো ফিরে পাবেন না! তবে যাঁর জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে তাঁকে উপযুক্ত শাস্তি দেব।”
বুধবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব অনিল বর্মা। বিকেলেই তিনি এসেছিলেন হাসপাতাল পরিদর্শনে। গাড়ি ওঠার মুহূর্তে হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীদের বেষ্টনী ভেঙে তাঁর খুব কাছাকাছি চলে যান ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলের চুনপাড়া গ্রামের অমল মাহাতো। চোখের জল মুছে অমলবাবু সচিবের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, “স্যার, আমার ছেলেটা বিনা চিকিৎসায় মরে গেল। ডাক্তারবাবু দেখতেও গেলেন না। এর একটা বিহিত করুন।”
সচিবকে দেখতে জড়ো হওয়া জনতাও তখন চিৎকার করে বলতে থাকেন, “ডাক্তারবাবুরা প্রাইভেট চেম্বার আর নার্সিংহোমকেই হাসপাতাল বানিয়েছেন। ওরা হাসপাতালে রোগী দেখতে আসেন না। আপনাকে বিহিত করতেই হবে।” সন্তানহারা অমলবাবু কেঁদেই চলেছেন।” প্রাথমিক ভাবে বুঝতে না-পারলেও থমকে দাঁড়ান প্রধান সচিব। তারপর ঘটনা বুঝে ডেকে নেন অমলবাবুকে।
হাসপাতালের ঘরেই মিনিট পাঁচেক কথা বলেন সন্তানহারা অমলবাবুর সঙ্গে। তারপর ফিরে যান গাড়িতে। সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি। তবে রাত ৮টার কিছু পরে হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে অমলবাবু বলেন, ‘‘প্রধান সচিব আসবেন বলে দুপুর থেকে অপেক্ষা করছিলাম। নিরাপত্ত রক্ষীরা বাধা দিয়েছিল। তবে অভিযোগ জানাতে পেরেছি। উনি অভিযুক্ত চিকিৎসককে শাস্তি দেবেন বলেছেন। আমি শাস্তি চাই।’’
ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া একমাসের রূপম মাহাতোর মৃত্যু হয়েছিল রবিবার। সে দিনই সুপারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন অমলবাবু, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর ছেলের। বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টেও শল্য চিকিৎসক গৈরিক মাজির দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। মঙ্গলবারই তাঁক শো কজ করেছেন সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি।
এ দিন সকালে নয়াগ্রাম এবং দুপুরে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন প্রধান সচিব। বিকেলে আসেন ঝাড়গ্রামে। পরিষেবার খামতি নিয়ে অসন্তুষ্ট সচিব সুপারদের ও সিএমওএইচকে ধমক দেন। সব চিকিৎসকদের হাজিরা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। ঝাড়গ্রামে দাঁত ও প্যাথোলজি বিভাগে অতিরিক্ত চিকিৎসক কমানোর নির্দেশ দেন প্রধান সচিব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy