অযত্নে: স্থাপত্য ঢাকা পড়েছে আগাছায়। নিজস্ব চিত্র
পরিখা ঘেরা প্রাসাদের ভিতরেই ছিল আস্ত একটা জনপদ! পারাং নদীর কুল ঘেঁষা টিলার উপর সেই প্রাসাদে বাস করতেন রানি শিরোমণি। ইতিহাসে যিনি চূয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী। রানির বীরগাথা এখনও কর্ণগড়বাসীর মুখে মুখে ফেরে। ঐতিহ্যের সেই প্রাসাদ এখন ধ্বংসস্তূপ। চারিদিকে ঝোপঝাড় আর সাপখোপের ডেরা। জনশ্রুতি, এক সময় এই প্রাসাদই ছিল দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের আঁতুড়ঘর।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, ঐতিহ্যের এই প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপকে সংরক্ষণ করে এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। কিন্তু সরকারি স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কর্ণগড় গ্রামে রয়েছে মহামায়া মন্দির।র বহু পর্যটক ওই মন্দির দেখতে আসেন। অথচ মহামায়া মন্দির থেকে মাত্র কিলোমিটার দূরে শিরোমণির প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ। সে কথা অনেকেই জানেন না।
প্রায় ১২০ বিঘে এলাকা জুড়ে ছিল শিরোমণির প্রাসাদ বা কর্ণগড়। ইংরেজ কোম্পানির শাসকরা রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জমিদার ও তাঁদের পাইক-বরকন্দাজদের দমন করার চেষ্টা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বহু জমিদার জমিদারি হারান। জমিদারদের পাইক-বরকন্দাজরাও জীবিকা ও জায়গির-জমি হারিয়ে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বাংলার ইতিহাসে সেটি চুয়াড় বিদ্রোহ নামে খ্যাত। দু’দফায় এই বিদ্রোহ হয়েছিল। দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রানি শিরোমণি। জনশ্রুতি, গোপনে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতেন ও অর্থ সাহায্য করতেন তিনি।
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ইংরেজরা শিরোমণিকে চুয়াড় বিদ্রোহের মূল নেত্রী ঘোষণা করে পরোয়ানা জারি করে। ওই দিন ব্রিটিশ বাহিনী পৌঁছলে কর্ণগড় থেকে গোপন সড়ঙ্গপথে মেদিনীপুরের আবাসগড় প্রাসাদে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন রানি। তাঁকে বন্দি করে কলকাতায় নিয়ে যায় ইংরেজরা। প্রাসাদ লুঠ করে ধ্বংস করে দেয় ইংরেজ সৈন্যরা। মুক্তি পাওয়ার পরে শিরোমণি আর কর্ণগড়ে ফিরে যাননি। মেদিনীপুরের আবাসগড়ের প্রাসাদে শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৮১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আবাসগড়েই তাঁর মৃত্যু হয়।
মেদিনীপুরের প্রবীণ পুরাতত্ত্ব গবেষক চিন্ময় দাশ, কর্ণগড়ের বর্ষীয়ান ইতিহাস রচয়িতা পরিতোষ মাইতি-রা দীর্ঘদিন কর্ণগড় নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরা বলেন, “অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তিনিই প্রথম রাজনৈতিক বন্দি। ইতিহাসের স্বার্থেই প্রাসাদের ধংসাবশেষ রক্ষা করা জরুরি।” গবেষকরা জানালেন, কর্ণগড়ের প্রাসাদটি মাকড়া পাথর এবং পোড়া ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। অনুমান, মূল প্রাসাদটি তিনশো বছরের বেশি পুরনো। প্রাসাদের লাগোয়া জলহরি দিঘি নৌকাবিহার করতেন কর্ণগড়ের রাজা-রানিরা। জলের মাঝে রয়েছে ‘হাওয়াখানা’।
তৃণমূলের কর্ণগড় অঞ্চল সভাপতি কাঞ্চন চক্রবর্তী বলেন, “প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ সংস্কার করা প্রয়োজন। এলাকাটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।” শালবনির বিডিও পুষ্পল সরকার বলেন, “কর্ণগড়ের প্রাসাদ এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাবনাচিন্তা করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy