কাঁধ-মিলিয়ে: এক সঙ্গেই পথ চলার অঙ্গীকার়। নিজস্ব চিত্র
যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে— বাংলার এই প্রবাদের হাতে কলমে প্রমাণ দিচ্ছেন শিবানি, মহুয়া, রাধা, রাণু, মিনাক্ষীদের মত ছয় গৃহিণী। ওই গৃহিণীদের গুণেই এখন ‘সুখী সংসার’ গড়তে চায় সুতাহাটা ব্লকের আশাদতলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, সুতাহাটা ব্লকের আশাদতলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্পূর্ণ দায়িত্বে থাকছেন মহিলারা। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ছ’জন সদস্যই মহিলা। পুরুষবিহীন ওই গ্রাম পঞ্চায়েত শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নয়, গোটা রাজ্যেও নজিরবিহীন বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
উল্লেখ্য, এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে আশাদতলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ছ’টি আসনে মহিলা প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছিলেন শাসক। বিরোধী কোনও প্রাথী না থাকায় তাঁরা সকলেই জয়ী হন। বীরশিবরাম নগরের বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, ‘‘বহু সমস্যা আগে জানাতে পারতাম না। এবার মহিলা সদস্য হওয়ায় অকপটে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জানাতে পারব।’’ বারাতলা, আশাদতলিয়া, গোবিন্দপুর, জামালচক, অনুন্তপুর-সহ ছ’টি জায়গায় মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ায় উন্নয়ন নিয়েও আশাবাদী এলাকাবাসী। তাঁদের আশা, রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও ভাল হবে।
ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মীনাক্ষী ভুঁইয়া বলেন, ‘‘গোটা পঞ্চায়েত মহিলা পরিচালিত, তা ভেবেই ভাল লাগছে। মেয়েরা যে শুধু হেঁশেলে আটকে থাকার জন্য নয়, উন্নয়নে সামিল হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে রাজ্য সরকার সেই প্রচলিত ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে।’’ অনন্তপুরের পঞ্চায়েত সদস্যা রানু মিশ্রের কথায়, ‘‘আমরা চাই এলাকা আরও উন্নত হোক। সব দিক থেকে উন্নয়নের নিরিখে শীর্ষে থাকতে চাই।’’ আশাদতলিয়ার ব্যাপারে আশাবাদী গ্রাম প্রধান শিবানী ঘোষ (বাখুলি)। তিনি বলেন, ‘‘গতবার পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছি। কিন্তু কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। এবার বাড়ি বাড়ি পানীয় জল, সাব মার্সিবল পাম্প বসানো-সহ নতুন নানা পরিকল্পনা নিয়েছি।’’
২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর পঞ্চায়েতে মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করেছিল বর্তমান রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই রীতিকে ছাপিয়ে আশাদতলিয়া ১০০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছেন মহিলারা। এ নিয়ে স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য আনন্দময় অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মহিলাদের বেশি করে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন। যা রাজ্য তথা দেশেও নজিরবিহীন।’’
আশাদতলিয়ার ঘটনা অন্য মহিলাদেরও উৎসাহিত করবে বলে মনে করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে হলদিয়ার মহকুমাশাসক কুহক ভূষণ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের উন্নয়ন আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে মহিলাদের আরও বেশি করে অংশগ্রহণের প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে এমন ঘটনা সারা জেলা-সহ রাজ্যের মহিলাদের কাছে প্রেরণা জোগাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy