গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে প্রতিযোগিতা। নিজস্ব চিত্র
গুমরে মরা কষ্টটা মাকে বলতে পারত না ছেলে। ছবিতেই ফুটে উঠত একরত্তির মাকে ছেড়ে স্কুলের হস্টেলে থাকার যন্ত্রণা। পরীক্ষার খাতাতেও ছবিই আঁকত সে। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ত। শাস্তি হিসেবে জুটত বাবার বকুনি-মার। পরে আঁকার শিক্ষকের সযত্ন ভালবাসাই ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ইশানের শিল্পী সত্তাকে সকলের সামনে তুলে ধরেছিল। ভুল বুঝে ঈশানকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন মা।
‘তারে জমিন পর’ সিনেমায় মা-ছেলের সম্পর্ক দেখে চোখের কোণ চিকচিক করেনি এমন দর্শক খুঁজে মেলা ভার। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের এমনই নানা দিক এ বার ফুটে উঠল পড়ুয়াদের কলমে। মাকে নিয়ে আস্ত প্রবন্ধ লিখল ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার এই আসর বসেছিল মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে। স্কুলের হীরক জয়ন্তী বর্ষপূর্তি শুরু হবে আর দিন কয়েক পরে। সেই উপলক্ষেই অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন।
প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল শহর-শহরতলির প্রায় কুড়িটি স্কুলের পড়ুয়ারা। কোনও স্কুল থেকে তিনজন, কোনও স্কুল থেকে আবার পাঁচজন পড়ুয়া এসেছিল। সকলেই অনধিক ৫০০ শব্দে মাকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছে। নির্দিষ্ট সময় ছিল দেড় ঘন্টা। যোগদানকারী সব পড়ুয়াকে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। আর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে হীরক জয়ন্তীর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল মন্দিরা সাউ, তাজমিন খাতুন, সুস্মিতা হাজরারা। মন্দিরা বলছিল, “প্রবন্ধ লেখা নতুন নয়। স্কুলে অনেকবার লিখেছি। তবে মাকে নিয়ে এই প্রথম লিখলাম। অন্য রকম অভিজ্ঞতা হল।” তাজমিনের কথায়, “মা-ই সব। মাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। সে সব লিখে দারুণ লাগছে।’’ সুস্মিতা বলছিল, “মাকে নিয়ে প্রবন্ধ লেখার অনুভূতিটা আলাদা। বলে বোঝানো যাবে না।”
এমন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার ভাবনা এল কী ভাবে? গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক বলছিলেন, “স্কুলের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই বিষয়টা ঠিক করা হয়েছে। আমরা অন্য রকম একটা বিষয়ের উপর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। মা-এর থেকে ভাল বিষয় আর কিছু হতো না।” গৌতমবাবুর কথায়, “মাকে আমরা বহুরূপে দেখতে পাই। দেশকে মা বলে ভাবতে পারি, দেবীকে মা বলে ভাবতে পারি, প্রকৃতিকে মা বলে ভাবতে পারি। মায়ের ভূমিকা ব্যাপক। এই বিষয়ে ছেলেমেয়েরা কী ভাবছে তা বোঝাটাই এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য।”
মা কী, মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক কী, কেন মা সন্তানের সব দিক জানতে পেরে যান, কখনও বকাঝকা করেন, কখনও চুপ থাকেন, এ সব উঠে এসেছে ছাত্রছাত্রীদের লেখায়। প্রতিযোগিতার জন্য পড়ুয়াদের নিয়ে গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে এসেছিলেন মৌপাল হাইস্কুলের শিক্ষক সমীর বিশুই, বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের (বালক) শিক্ষক অনুকূল দাস, ভাদুতলা হাইস্কুলের শিক্ষক প্রতাপ পাঁজা প্রমুখ। সমীরবাবুর কথায়, “আমরা মায়ের কথা কখনও অমান্য করতাম না। আজকাল কিছু ছেলেমেয়েদের আচরণ মাকে বিচলিত করছে। এটা অনভিপ্রেত।” অনুকূলবাবু, প্রতাপবাবুদের মতে, “একজন মা একশোজন শিক্ষকের সমান। এটা ভুলে গেলে চলবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy