জঙ্গলে জখম হয়েছিল এই বাছুরটিই। বাঁধগোড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
টিনের ছাউনি দেওয়া দোতলা মাটির বাড়ি। সামনের উঠোনে বাঁধা মাস আটেকের বাছুরটার সারা শরীরে আঁচড়-কামড়ের ক্ষত। থর থর করে কাঁপছিল সে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা বাছুরকে দেখতে রবিবার সকালে বাঁধগোড়া গ্রামের অশ্বিনী মানার বাড়ির সামনে বেশ ভিড়।
শনিবার বিকেলে লালগড় ব্লক সদর থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে বাঁধগোড়ায় এই বাছুরের জখম হয়া ঘিরেই উস্কে গিয়েছে পুরনো স্মৃতি। ফিরে এসেছে বাঘের ভয়। লালগড়বাসীর মনে প্রশ্ন— জঙ্গলে কি ফের হানাদার হাজির হয়েছে? বন দফতর এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না। ডিএফও (মেদিনীপুর) রবীন্দ্রনাথ সাহার বক্তব্য, ‘‘অযথা আতঙ্কের কারণ নেই। বনকর্মীরা ওই এলাকার জঙ্গলে নজরদারি চালাচ্ছেন। এখনও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
বাঁধগোড়ার বাসিন্দারা গ্রামের অদূরে শাল জঙ্গলে গরু চরাতে নিয়ে যান। তবে জঙ্গলে এখন হাতি থাকায় বাসিন্দারা বেশি ভেতরে ঢুকছেন না। গরু-ছাগলের পাল অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিন ঘাস-পাতা খেয়ে বিকেলে গরুর পাল গোয়ালে ফিরে আসে। শনিবার বিকেলে অশ্বিনীবাবুর বাকি গরুগুলি ফিরে এলেও বকনা বাছুরটি ফেরেনি। গরুর পালের একটি এঁড়ে বাছুরের গায়ে আঁচড়ের দাগ দেখে সন্দেহ হয় অশ্বিনীবাবুর। জঙ্গলের দিকে ছোটেন তিনি। সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় জখম বাছুরটিকে। তারপর থেকেই ভয় দানা বেঁধেছে বাঁধগোড়ায়। অশ্বিনীবাবু বললেন, ‘‘এ দিন আর গরুদের জঙ্গলে পাঠাইনি। উঠোনেই বাঁধা রয়েছে।’’ স্থানীয় যুবক দীপক মানা, প্রৌঢ়া কাজলি মাহাতোরাও বললেন, ‘‘জঙ্গলে গরু-বাছুর ছাড়ার সাহস পাচ্ছি না।’’
চলতি বছরের গোড়ায় লালগড়ের জঙ্গলে উদয় হয়েছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। সে বারও প্রথম দিকে গরু, ছাগল জখম হচ্ছিল। ফাঁদ পেতেও বাঘ ধরা পড়েনি। শেষে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাঘরায় বাঘটিকে পিটিয়ে মারে একদল শিকারি। তাই ভয় যাচ্ছে না লালগড়বাসীর। শঙ্কর মাহাতো বাঁধগোড়া চকে চা দোকানে বসে রবিবারও ভয়ে কাঁটা হয়েছিলেন। শনিবার জঙ্গলে গরু-ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন তিনি। শঙ্কর বলেন, ‘‘শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ আচমকা গরুগুলো হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে। জঙ্গলের আড়ালে একটা জন্তুকে দেখেছিলাম। ঠিক ঠাহর করতে পারিনি।’’
অশ্বিনীবাবুর ভাই নলিনী মানা অবশ্য বললেন, ‘‘হুড়াল কিংবা নেকড়ে জাতীয় কোনও প্রাণীর হামলায় বাছুরটি জখম হয়েছে বলে অনুমান। কেউই প্রাণীটিকে দেখেননি। তাই নানা গুজব ছড়াচ্ছে।’’ শনিবার জখম বাছুরটির চিকিৎসা করেছিলেন লালগড়ের বেসরকারি প্রাণী চিকিৎসক অসীম সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষত দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে নেকড়ে জাতীয় কোনও প্রাণীর হামলায় বাছুরটি গুরুতর জখম হয়েছে। বাঘ হলে এত ছোট বাছুর কী প্রাণে বাঁচত!’’
এ দিন লালগড় রেঞ্জ ও লালগড় বিটের বনকর্মীরা জখম বাছুরটির তথ্য সংগ্রহ করেন। জঙ্গলে পায়ের ছাপের ছবিও তোলেন তাঁরা। ডিএফও জানান, ডব্লিউডব্লিউএফের বিশেষজ্ঞরা ছবি দেখে প্রাথমিক ভাবে হানাদারকে বড়সড় নেকড়ে বলেই সন্দেহ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy