Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাস নেই, ভিড়ে ভোগাল ট্রেনও

এই শিক্ষকের কথায়, “সারা সপ্তাহ শেষে একদিনের জন্য বাড়ি ফিরি। জানি না কখন কল্যাণী পৌঁছব।”

দরাদরি: বাস নেই। তাই ছোট গাড়িই ছিল ভরসা। —নিজস্ব চিত্র।

দরাদরি: বাস নেই। তাই ছোট গাড়িই ছিল ভরসা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

কল্যাণীর বাসিন্দা অমিত সিংহ রায় সবংয়ের মশাগ্রাম শিবানন্দ হাইস্কুলের শিক্ষক। সপ্তাহভর ক্লাস নেওয়ার পরে প্রতি শনিবার বাড়ি ফেরেন তিনি। এই শনিবার পথে বেরিয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হলেন তিনি। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বাস পাননি। শেষে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বাইকে চাঁদকুড়ি পৌঁছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে ভিড়ে ঠাসা একটি বাসে কার্যত বাদুড়ঝোলা হয়েই ৩৫ কিলোমিটার দূরে বালিচক স্টেশনে পৌঁছন তিনি। এই শিক্ষকের কথায়, “সারা সপ্তাহ শেষে একদিনের জন্য বাড়ি ফিরি। জানি না কখন কল্যাণী পৌঁছব।”

মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর যাওয়ার জন্য নতুনবাজারে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী শুভজিৎ রায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে একটা ছোট গাড়ি পেয়েছিলেন। তবে চালক জানিয়ে দেন, দেড়শো টাকা লাগবে। শেষে অনেক অপেক্ষার পরে মিনিবাসে খড়্গপুর যান তিনি। শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর দেড়শো টাকা! ভাবা যায়!’’

পথে বেরিয়ে অমিত, শুভজিতের মতো ভুগেছেন এ দিন অনেকেই। সৌজন্যে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ।

মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর থেকে গাঁ-গঞ্জ— পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়েই শনিবার পথে বাস একদমই কম ছিল। মওকা বুঝে বাড়তি ভাড়া হেঁকেছে ছোট গাড়ি যেমন ট্যাক্সি, অটো, টোটো। ট্রেনও ছিল ভিড়ে ঠাসা। সব মিলিয়েই বেড়েছে পথের দুর্ভোগ।

সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্কুল শিক্ষক ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের চূড়ান্ত দুর্ভোগ হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজগুলো খোলা ছিল। হাজিরায় তেমন প্রভাব পড়েনি। কেশপুরের ঝেঁতল্যা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘‘হাজিরা অন্য দিনের মতোই ছিল। আশেপাশের এলাকার ছেলেমেয়েরাই স্কুলে পড়ে। আর শিক্ষকদের অনেকে গাড়িতে করে এসেছেন।’’ রেলশহরের অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষকেরা বাস না পেয়ে বাইকে, ট্রেনে পৌঁছেছেন। আর ডেবরা, সবং, পিংলা, দাঁতন, কেশিয়াড়ি মতো এলাকায় যেখানে বাস ছাড়া যাওয়া কষ্টের, সেখানে স্কুলে যেতে শিক্ষকদের নাকাল হতে হয়েছে। অনেকেই বালিচক, বেলদায় ট্রেনে পৌঁছে স্কুলে পৌঁছেছেন। আবার অনেকেই স্কুলে আসতেই পারেনি। যেমন ডেবরার হরিমতি হাইস্কুলে ৪৬জন স্কুল শিক্ষকের মধ্যে ৭জন গরহাজির ছিলেন। প্রধান শিক্ষক তমাল বসু বলেন, “দু’জন শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। একজন বিএড পড়ছেন। আর জনা চারেক শিক্ষক আসেননি।”

বাস না থাকার সুযোগে বাড়তি ভাড়া হেঁকেটে অটোও। যেখানে অটো ভাড়া ১০- ১৫ টাকা, সেখানে দিতে হয়েছে ২০- ২৫ টাকা। ভিড়ে ঠাসা হয়ে চলেছে ট্রেকারগুলো। সকালের দিকে রীতিমতো ধস্তাধস্তি করে উঠতে হয়েছে গাড়িতে। মেদিনীপুরে দেখা গিয়েছে, স্ট্যান্ডে একটি অটো এলে সবাই ছুটেছেন। মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডেও প্রাইভেট গাড়িরও আনাগোনা ছিল এ দিন। একটি রুটে ১০-১২ জন যাত্রী পেলে দরাদরি করে যাত্রীদের উঠিয়ে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে গাড়ি। কেশপুরের এক স্কুল শিক্ষক মানছেন, ‘‘বাস না পেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ট্রেকারে উঠেছিলাম। ট্রেকারেই স্কুলে এসেছি।’’ জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির যদিও দাবি, ‘‘বাস একদম ছিল না তা নয়। শনিবার কিছু মিনিবাস চলেছে।’’

বাস না পেয়ে অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রেনের উপর ভরসা করেছেন। ফলে, ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় ছিল যথেষ্ট। তৃণমূলের বহু কর্মী ট্রেনে হাওড়া যাওয়ায় ভিড় আরও বেড়েছে। বেলার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। খড়্গপুর থেকে ট্রেনে কলকাতায় যান বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুদর্শন গুহ। তিনি বলেন, “আমি মূলত স্টিল এক্সপ্রেস ধরি। কিন্তু ব্রিগেডের জন্য স্টিল, পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, শিরোমণি প্যাসেঞ্জার সবক’টি ট্রেনেই পা রাখার জায়গা ছিল না। শেষে একটা লোকাল ট্রেনে অনেক দেরিতে হাওড়া পৌঁছেছি। অফিস যেতে দেরি হবে।’’

সকাল থেকে ঘাটালের রাস্তাও ছিল সুনসান। দু’দিন ধরেই ব্রিগেডের জন্য বাস তোলা শুরু হয়েছিল। এ দিনও দুর্ভোগ চলেছে। রুটের বাস না থাকায় আনাজ ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন। মহকুমা জুড়ে হাসপাতালের বহিবির্ভাগেও রোগীর ভিড় ছিল কম। দুর্ভোগের অন্ত ছিল না গোয়ালতোড়, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোডেও। এই তিনটি ব্লক থেকে ১২০ টির মতো বাস এ দিন ব্রিগেডের জন্য 'বুক' করা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। সুযোগ বুঝে ১০-১৫ টাকা বেশি ভাড়া হেঁকেছে টোটো, অটো, ট্রেকার। নয়াবসতের দীপক মণ্ডল বৃদ্ধা মায়ের চোখ দেখাতে মেদিনীপুর যাচ্ছিলেন। বাস না পেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে টোটোয় চেপে চন্দ্রকোনা রোড স্টেশনে এসে দেখেন ট্রেন ভিড়ে ঠাসা। শেষে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Brigade Kolkata brigade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE