দলবদল। নিজস্ব চিত্র
করোনাকালেই কিস্তিমাত।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাতছাড়া হওয়া কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে দীর্ঘ আড়াই বছর পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল তৃণমূল। সোমবার জেলা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে এসে পঞ্চায়েত সমিতির দুই বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়াতেই বদলে গেল সমীকরণ। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ছিল ১২টি। এ দিন তৃণমূলের আসন বেড়ে হল ১৪। বিজেপির কমে দাঁড়াল ১১।
প্রায় আড়াই বছর আগে পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হওয়ার পরপরই কেশিয়াড়িতে এসে সভা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন তিনি কেশিয়াড়ি ‘পুনরুদ্ধারে’র দায়িত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। দায়িত্ব পেয়ে কেশিয়াড়িতে এসেছেন শুভেন্দু। কখনও ‘ক্লোজ ডোর’, কখনও প্রকাশ্যে সভা করেছেন। বার্তা দিয়েছেন, একটা লোককেও বিজেপির পঞ্চায়েতের কাছে যেতে হবে না। সমস্যা হলে বিডিও-র কাছে, আক্রমণ করলে থানার আইসি-র কাছে যেতে হবে। তবে শুভেন্দুর সক্রিয়তাতেও কেশিয়াড়ি তৃণমূলের হাতে ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলার কারণ দর্শিয়ে প্রশাসন শুধু বারবার পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন পিছিয়ে দিয়েছে।
তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, দলের সঙ্গে সম্প্রতি ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে শুভেন্দুর। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ এড়িয়ে চলছেন তিনি। জেলায় জেলায় শুভেন্দুর অনুগামীরা তাঁর ছবি গলায় ঝুলিয়ে সমান্তরাল জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে হঠাৎ তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় উঠে আসছে নতুন সমীকরণ। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘হারানো’ কেশিয়াড়ির দিকে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর পড়েছে, সপ্তাহ কয়েক ধরেই তা স্পষ্ট হচ্ছিল। সম্প্রতি সাংসদ মানস ভুঁইয়াকে দলের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কেশিয়াড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মানস দলের অন্দরে অভিষেক-অনুগামী বলে পরিচিত। সোমবার মানস বলেন, ‘‘দিন কয়েক ধরেই বিজেপির নির্বাচিত সদস্যরা আমাদের দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। তৃণমূলে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে শামিল হতে চাইছিলেন।’’ মানসের সংযোজন, ‘‘বিজেপি শুধু মুখে বলে, কাজ করে না। তৃণমূল কাজ করে।’’ সপ্তাহ খানেক আগে যুব তৃণমূলের রাজ্য সংগঠনে পদপ্রাপ্তি হয় কেশিয়াড়ি ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি পবিত্র শীটের বোন কল্পনা শীটের। সোমবার পবিত্র বলেই দিলেন, ‘‘সময় পরিবর্তনের সঙ্গেই এই পরিবর্তন হল। অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতোই কাজ করা হচ্ছে।’’
সোমবার দলবদলের পরে নবকুমার সিংহ ও শান্তি কিস্কু নামে বিজেপির টিকিটে জেতা ওই দু’জন দাবি করেছেন, ‘‘বিজেপি কোনও উন্নয়নে নেই। তৃণমূলের উন্নয়নে শামিল হতেই এই দলত্যাগ।’’ এ দিন কেশিয়াড়ি বিজেপি নেতা অর্জুন দাস-সহ কয়েকজনও তৃণমূলে এসেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে তিন দফায় আইন-শৃঙ্খলা অবনতির হওয়ার আশঙ্কায় ওই পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। সোমবারের দলবদলের পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যাওয়া সেই বোর্ড গঠন কবে হয় সেই দিকেই তাকিয়ে জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা। জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘এ বার আমরা পঞ্চায়েত সমিতি গঠনে উদ্যোগী হব।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের বিষয়টি রাজ্য সরকারের হাতে। সবটাই শাসক দলের হাতে। এরপর আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাব। দলকে আরও শক্তিশালী করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy