দিদিকে বলোয় দিলীপ (চিহ্নিত)।
আসি আসি শীতের বিকেল। মরা রোদে চলেছে তৃণমূলের মিছিল।
গ্রামের নাম কুলিয়ান। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাপ-ঠাকুরদার ভিটে। সে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে তৃণমূলের মিছিল চলছে এঁকেবেঁকে। উপলক্ষ ‘দিদিকে বলো’। মিছিলের সামনের সারিতে রয়েছেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। হাসিমুখে এগিয়ে চলেছেন। পথের মাঝে কারও সঙ্গে দেখা হলে হাত জোড় করে বলছেন, ‘‘আমি তৃণমূলের দিলীপ ঘোষ। দিদির নির্দেশে আপনাদের সমস্যা জানতে এসেছি। অভাব-অভিযোগ যা আছে নির্দ্বিধায় আমাকে বলুন।’’ বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়ার কুলিয়ানে।
বয়স বছর ৫৯। চোখে চশমা। চেহারায় শাসক দল সুলভ দাপট নেই। তবে যা আছে তা হল, আপন করে নেওয়ার চেষ্টা। অবাক চোখে তাঁকে দেখলেন অনেকে। কেউ বললেন রাস্তার সমস্যার কথা। কেউ চাইলেন শ্মশানঘাট। কেউ বললেন, ‘‘আপার প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকের অভাব। একটু দেখবেন।’’
কুলিয়ানে এখন থাকেন দিলীপের মা ও ভাইয়েরা। এমন গ্রামে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য ভোট কুশলী প্রশান্ত কুমারের দফতর থেকে টিম লিডার করা হয়েছে তৃণমূলের দিলীপ ঘোষকে। গোপীবল্লভপুরের সাতমা গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূলের এই দিলীপ হলেন ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য। তৃণমূলের যখন জন্ম হয়নি নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ছিলেন গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক যুব কংগ্রেসের সভাপতি। তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে মমতার দলে যোগ দেন। জেলা পরিষদের এই প্রাক্তন সদস্য দিলীপ বলছেন, ‘‘বিজেপি রাজ্য সভাপতির গ্রামের মানুষ কিন্তু আমাকে সাদরেই কাছে টেনে নিয়েছেন। মিছিলের সময়ে পথচলতি মানুষজন এগিয়ে এসে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। প্রত্যেকের কাছে যাব। গ্রামে এসে বুঝলাম, কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগের বিষয়ে যথাস্থানে জানাব।’’
কুলিয়ানা গ্রামের বকুলতলায় গ্রামবাসীদের নিয়ে পাড়া বৈঠক করার সময় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘এই গ্রামে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর বাড়ি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। কিন্তু এক বছরের বেশি ক্ষমতায় থেকেও ওরা উন্নয়ন করতে পারেনি। আমাদের দিলীপ ঘোষ এসেছেন আপনাদের অভাব-অভিযোগ জানতে। দিদিকে আপনাদের সমস্যা উনি জানাবেন।’’
এক দিলীপ বিজেপির রাজ্যের মুখ। তাঁর গ্রামেই দিদিকে বলো কর্মসূচিতে ঘুরছেন তৃণমূলের দিলীপ। মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘শুক্রবার সকালে ফেরার আগে বিজেপি-র দিলীপবাবুর বাড়িতেও যাব।’’ তবে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যদিও বিঁধছেন, ‘‘চোরেদের সঙ্গে থেকে যে পাপ করেছেন আমার বাড়িতে গেলে সেই পাপক্ষালন হয়ে যাবে। যাক, আমার মায়ের আশির্বাদ নিয়ে আসুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy