ক্ষোভটা জমেছিল। ভারতী ঘোষ সরতেই পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে শাসক দলের একাংশ কর্মীর সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এল। স্লোগান উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে এই ঘটনার সাক্ষী রইল মেদিনীপুর শহরের এক বেসরকারি হাসপাতাল চত্বর।
এই হাসপাতালে ভর্তি এক যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতেই রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার নেতা আনিসুর রহমানকে। গোড়ায় আটক করে অনিসুরকে ওই হাসপাতালেই রেখেছিল মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। আনিসুরকে গ্রেফতারে গড়িমসি করা হচ্ছে, এই অভিযোগে তখনই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে শহরের একাংশ তৃণমূল কর্মী, যাদের মধ্যে যুবকর্মীর সংখ্যাই ছিল বেশি। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ কর্তাদের উদ্দেশে তৃণমূল কর্মীদের বলতে শোনা যায়, ‘‘আর ভারতী ঘোষের জমানা নেই। গত ছ’বছর কী করেছেন ভুলে যান। এখন আর কোনও মস্তানি চলবে না। বেশি চমকালে বিহারে বদলি করে দেবো!’ কেউ কেউ আবার বলে ওঠেন, “গত ছ’বছরে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি। সব সময় ভয়ে ভয়ে থেকেছি। মনেই হত না সরকারি দল করি।’’ পুলিশের উদ্দেশে কটূক্তিও করেন একদল তৃণমূল কর্মী। একটা সময় ‘হেনস্থা’র মুখে পড়েন পুলিশ কর্মীরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শচীন মক্কর, কোতোয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশীর সামনেই এই কাণ্ড ঘটে। জেলা পুলিশের এক কর্তাও মানছেন, “যে ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, সেই দলে ছিলেন শহরের তৃণমূল কর্মী স্নেহাশিস ভৌমিক, রাজু মান্না প্রমুখ। হাসপাতালের চারতলার একটি ঘরে রাখা হয়েছিল আনিসুরকে। কোনও বাধা না মেনেই সেখানে চলে যান তৃণমূল কর্মীরা। যে ঘরে আনিসুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আচমকা সেই ঘরে ঢুকে পড়েন স্নেহাশিস। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন। এরপরই তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। ওই চারতলাতেই বিক্ষোভ- স্লোগান শুরু হয়। পুলিশকে বিঁধে তৃণমূল কর্মীদের বলতে শোনা যায়, ‘কোনও রফা চলবে না, আনিসুরকে এখনই গ্রেফতার করতে হবে’, ‘এ বার পুলিশ মারলে পাল্টা মার হবে’। পরে রাজু বলছিলেন, “কর্মীদের এই ক্ষোভ স্বাভাবিক। এক সময় পুলিশ আমাকেও থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করেছে। সে দিন আর নেই, এটা বুঝতে হবে!”
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার পদে থাকাকালীন জেলার তৃণমূলেও নিয়ন্ত্রণ ছিল ভারতীর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁর অন্য দাপট ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই ভারতীই পুলিশের চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে, তৃণমূলের যে অংশ এতদিন চুপ ছিল, তারা পুলিশের বিরুদ্ধে গলা চড়াতে শুরু করেছে। গভীর রাতে আনিসুরকে যখন গ্রেফতার করে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যায় পুলিশ, তখন পাঁশকুড়ার ওই নেতাকে কিল-ঘুষি পর্যন্ত মারা হয়। তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হাসপাতালের সামনে বাড়তি পুলিশও আনতে হয়।
তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতালের ঘটনার কথা শুনেছি। ঠিক কি হয়েছে খোঁজখবর নিচ্ছি।” তিনি বলেন, “পুলিশের উদ্দেশে দলের কেউ কটূক্তি করে থাকলে তা অনভিপ্রেত। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনও কাজ দলের কোনও কর্মীর করা উচিত নয়। প্রয়োজনে দল এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy