Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিধায়ক শুনলেন, দিদি ভাল, খারাপ নেতারাই 

   শুরুর দিকে হোঁচট। তারপর বেলা যত বেড়েছে ততই সামলাতে হয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ। রাতে ফেরার আগে আশিস বললেন, ‘‘গ্রামের মানুষ এখনও কতটা দিদিকে ভালবাসে এ দিনের সফরে তার কিছুটা টের পেলাম।’’

পরনের লুঙ্গিটাও ছেঁড়া। নয়াবসান গ্রামে বৃদ্ধের দুর্দশা দেখলেন বিধায়ক দুলাল মুর্মু। ছবি: কিংশুক গুপ্ত

পরনের লুঙ্গিটাও ছেঁড়া। নয়াবসান গ্রামে বৃদ্ধের দুর্দশা দেখলেন বিধায়ক দুলাল মুর্মু। ছবি: কিংশুক গুপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

ছুটির দিন। সঙ্গী সহযোগে জনসংযোগে বেরিয়েছেন বিধায়ক।

কয়েকটি ঘর ঘুরে গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী পৌঁছছেন ফতেসিংহপুরের কলতলায়। বিধায়ককে দেখে মধ্য পঞ্চাশের এক মহিলা বললেন, ‘‘দিদি ভাল, আপনারাই খারাপ।’’

শুরুর দিকে হোঁচট। তারপর বেলা যত বেড়েছে ততই সামলাতে হয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ। রাতে ফেরার আগে আশিস বললেন, ‘‘গ্রামের মানুষ এখনও কতটা দিদিকে ভালবাসে এ দিনের সফরে তার কিছুটা টের পেলাম।’’

নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মুকে আবার শুনতে হল, ‘‘এখন জানি না কোন ভোটের প্রচারে এসেছেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের চাতাল বানিয়েও সাত বছরেও কেন প্রাপ্য টাকা পেলাম না সেটা দেখুন।’’ একজন তো আবার বিধায়কের কাছে চেয়ে ফেললেন আস্ত একটা লুঙ্গি।

পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম। দুই জেলায় বিধায়কদের রবিবাসরীয় জনংযোগে এটাই ছিল সংক্ষিপ্ত ছবি।

খয়রাচটিতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় দীনেন রায়। নিজস্ব চিত্র

গড়বেতার ফতেসিংহপুরের কলতলায় মধ্য পঞ্চাশের মহিলা কিন্তু দিদিকে ভাল, আর বাকি নেতাদের খারাপ বলেই থেমে যাননি। ভাল-খারাপের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এতসব প্রকল্প দিদি করেছে। কিন্তু আমরা গ্রামের গরিব মানুষগুলো কী পেয়েছি? না পেয়েছি ঘর। না পেয়েছি ভাতা। নেতারাই সব মেরে দিচ্ছে। দিদি ভাল হলে কী হবে, উয়ারা (নেতারা) কী ভাল!’’

‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে এ দিন গড়বেতার বিধায়ক আশিস নিজের কেন্দ্রের অন্তর্গত আমকোপা অঞ্চলের ফতেসিংহপুর, ভেদুয়া, সাহেবডাঙা গ্রামে যান। নির্দিষ্ট সূচি অনুযায়ী মানিক সাইনি, বিধান রানা, কাজল সাইনি ও সুজয় বাগের বাড়িতে যান তিনি। সকলেরই বাড়ি ফতেসিংহপুরে। চার জনই চাষি। মানিকের মা জ্যোৎস্না বিজেপির সন্ত্রাসের নালিশ জানান। ওই গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা বনমালী প্রৌঢ় গড়াই বিধায়কের কাছে কাঁদতে কাঁদতে একটি পাকাঘর করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। ডায়েরিতে নাম ফোন নম্বর লিখে আশ্বাস দেন বিধায়ক।

ফতেসিংহপুরের পাড়ার মোড়ে বিধায়ককে দাঁড় করিয়ে সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ জানান স্থানীয় মহিলারা। নেতাদের কাটমানি খাওয়া-সহ উন্নয়নের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ শুনতে হয় বিধায়ককে। দুপুরে ভুলা গ্রামে যান বিধায়ক। সেখানে দলীয় নেত্রী ভারতী হেমব্রমের বাড়িতে দুপুরের খাবার খান তিনি। মেনুতে ছিল ভাত, আলুপোস্ত ও ডিম। বিকেলে ভেদুয়া, সাহেবডাঙা, রেউদি গ্রামে গিয়ে জনসংযোগ সারেন। রাতে রেউদি গ্রামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও যোগ দেন আশিস। ফেরার পথে জানিয়ে যান, সারাদিনে দিদির জনপ্রিয়তা পুনরাবিস্কারের কথা।

এ দিন নয়াগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের অন্তর্গত বিজেপি-র ক্ষমতাসীন ৫ নম্বর গোপীবল্লভপুর পঞ্চায়েতের নয়াবসান গ্রামে ঘোরেন দুলাল। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সত্যরঞ্জন বারিক। দুলালের সারাদিনের কর্মসূচি ফেসবুকে লাইভও করা হয়। দুলাল নয়াবসান গ্রামের দু’টি গ্রাম সংসদ এলাকায় ঘোরেন। তার মধ্যে গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে নয়াবসান উত্তর বুথে জিতেছে বিজেপি। নয়াবসান দক্ষিণ বুথে তৃণমূল জিতেছে।

নয়াবসানের সত্যবতী তরাই অভিযোগ করেন কোনও সরকারি প্রকল্পে তাঁর নাম নেই। বৃদ্ধ কমল তারাই বলেন, ‘‘আপনারা পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘরের ফুটো ছাদ ঢাকা দেওয়ার একটা ত্রিপল চেয়েও মে‌লেনি। তাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছি।’’ বৃদ্ধ প্রতাপ জানার আক্ষেপ, বার্ধক্য ভাতার ক’টা টাকায় সংসার চলে না। লুঙ্গি ছিঁড়ে গিয়েছে। বিধায়কের থেকে লুঙ্গি চান তিনি। কৃষ্ণা দাস বলে এক গ্রামবাসী দাবি করেন, তাঁর ছেলের সিভিক ভলান্টিয়ার্সের চাকরি পাওয়ার কথা থাকলেও অন্য একজন সেই কাজ পেয়েছে। এ দিন রাত পর্যন্ত ব্রাহ্মণ পাড়া তরাই পাড়ার মতো নয়াবসান গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন দুলাল।

দ্বিতীয় দফাতেও জনসংযোগে খড়্গপুর-১ ব্লকের গোপালী পঞ্চায়েত এলাকাতেই গেলেন খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক দীনেন রায়। গোপালী পঞ্চায়েতের খয়রাচটিতে পাঁচজন প্রভাবশালীর মুখোমুখি হন তিনি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি ডিপ-টিউবওয়েলের জলে লোহার পরিমাণ বেশি। বারবার জানিয়েও সমস্যা মেটেনি। পরে দীনেন যান সালুয়ার ইএফআর ক্যাম্প লাগোয়া ‘নো-শুটিং’ এলাকায়। সেখানে কয়েকজন অভিযোগ করেন, জবকার্ড থাকা সত্ত্বেও একশো দিনের কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকায় নলবাহিত জল সরবরাহের দাবিও জানান কেউ কেউ। পরে দীনেন বলেন, “নানা সমস্যার কথা শুনেছি। সেগুলির সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC MLA Didike Bolo Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE