Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাট্টা জমি ভোল বদলে লিজ!

রীতিমতো হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন সাদিচক ও মনো‌হরপুর গ্রামবাসীদের একাংশ।

সেই হ্যান্ডবিল। —নিজস্ব চিত্র।

সেই হ্যান্ডবিল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

প্রভাব খাটিয়ে পাট্টা পাওয়া জমি লিজ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের বিরুদ্ধে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নাকি মেটেনি। তাই এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিকার চাইলেন স্থানীয়েরা। রীতিমতো হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন সাদিচক ও মনো‌হরপুর গ্রামবাসীদের একাংশ।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ্যে আসে ওই হ্যান্ড বিল। সেখানে কাটান, সাদিচক ও মনো‌হরপুর গ্রামবাসীদের একাংশের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে‌, ‘মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েতের কাটান মৌজার জেএল নম্বর ১৪৯, দাগ নম্বর ৮১০, খতিয়ান ৫১২৭, জমির পরিমাণ ৭ শতক। উক্ত খাস জমি বিগত পঞ্চায়েতের তরফে সাদিচক গ্রামের বসিন্দা মণিমোহন দোলইকে পাট্টা দেওয়া হয়। সেটাই জমি ব্যবসায়ী মুজিদ আলি সামান্য টাকার বিনিময়ে মণিমোহনের কাছ থেকে বিধায়ক শঙ্কর দোলই ও বিধায়ক ঘনিষ্ঠ আইনজীবী দয়াময় চক্রবর্তীকে সঙ্গী করে দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করেছে। এবং জমির দখল নেয়’।

দয়াময় ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ। একই সঙ্গে তৃণমূলের অন্দরে তিনি বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিতি। ভূমি দফতর অথবা সংশ্লিষ্ট কোনও জায়গায় লিখিত কোনও অভিযোগ করা হয়নি। তবু কাটমানির আবহে হ্যান্ড বিলে বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠায় তৃণমূলের অন্দরে শোরগোল শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে শঙ্কর বলছেন, “এটা অপপ্রচার। কাউকে কোনও সুবিধা পাইয়ে দিইনি। ঘাটালের মানুষ আমাকে চেনে। তদন্ত হলেই সত্যিটা সামনে আসবে।’’ অভিযোগ মানতে চাননি আইনজীবী তথা ভূমি কর্মাধ্যক্ষ দয়াময়। তিনি বলেন, “ঘটনায় আমি জড়িত প্রমাণ হলে ভূমি কর্মাধ্যক্ষের পদ ছেড়ে দেব।’’

যে জমি নিয়ে বিতর্ক, সেটি রয়েছে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের পাশেই। ঘাটাল ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, জমির বাজার মূল্য কোটির উপরে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে জমি। চলছে টিনের শেড নির্মাণ। পাট্টা প্রাপক জমির মালিক মণিমোহনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। হ্যান্ড বিলে যাঁর নামে জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে সেই মুজিদ আলি বলেন, “ওই ভদ্রলোক (মণিমোহন) জমি বাবদ টাকা নিয়েছে। তবে জমি আমি নিইনি।’’ কিন্তু জমি তো পাট্টায় পাওয়া। তা হলে মণিমোহন কী ভিত্তিতে জমি বাবদ টাকা নিলেন আর মুজিদও বা কী ভিত্তিতে টাকা দিলেন? সদুত্তর দেননি মুজিদ। তিনি শুধু বলেন, ‘‘জমি যার ছিল তারই রয়েছে।’’

বিষয়টি কানে গিয়েছে প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “অভিযোগ মারাত্মক। পাট্টা জমি কোনও ভাবেই হস্তান্তর করা যায় না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব দোলইয়ের মন্তব্য, “আমি কিছু জানি না। তবে ওই পাট্টা জমিতে কোনও নির্মাণ হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’

খোদ বিধায়কের নামে এমন অভিযোগ ওঠায় বিজেপি আসরে নেমে পড়েছে। দলের ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের নেতারা যে দুর্নীতিগ্রস্ত কাটমানির পরে এই হ্যান্ডবিলে তা আবারও স্পষ্ট হল। ঘাটালে জমি কেনাবেচা ও দালালি নিয়ে বহু অভিযোগ আছে। প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। আমরাও আন্দোলনে নামব।’’ তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি দিলীপ মাঝির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরছে। অভিযোগ মিথ্যে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE