Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
অতিমারির মধ্যে শাসক দলের অসচেতনতায় প্রশ্ন
Coronavirus

করোনা জয়ী নেতার সংবর্ধনা, বিধি ভেঙে ঢল

কয়েকদিন আগে করোনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন কাঁথি দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা। মঙ্গলবার তাঁকে সংবর্ধনা দেয় শাসক দলের কর্মীরা।

তৃণমূল নেতার গাড়ি ঘিরে মিছিল। অনেকের মুখেই দেখা নেই মাস্কের। মঙ্গলবার কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল নেতার গাড়ি ঘিরে মিছিল। অনেকের মুখেই দেখা নেই মাস্কের। মঙ্গলবার কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:০৮
Share: Save:

অতিমারি করোনায় একজন বিধায়ক মারা গিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী থেকে নেতা অনেকেই। খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় থেকে মন্ত্রী-বিধায়কদের গলায় বার বার শোনা গিয়েছে করোনা নিয়ে সতর্কতার বার্তা। তার পরেও রাজ্যের শাসক দলের নেতা-কর্মীদে-সমর্থকদের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতার অভাবের নজির প্রত্যক্ষ করলেন মানুষ। বুধবার কাঁথিতে। যা নিয়ে তাঁরা কাটগড়ায় তুলেছেন শাসক দল তৃণমূল এবং জেলা প্রশাসনকে।

কয়েকদিন আগে করোনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন কাঁথি দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা। মঙ্গলবার তাঁকে সংবর্ধনা দেয় শাসক দলের কর্মীরা। এদিন দেশপ্রাণ বিডিও অফিসে উন্নয়ন সংক্রান্ত মিটিংয়ে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তরুণ। সেই সময় গোটা রাস্তা জুড়ে জমায়েত করে মিছিল করেন তৃণমূল কর্মীরা। বাদ্যি বাজানো থেকে বাজি ফাটানো সবকিছুর সাক্ষী থাকলেন এলাকার মানুষ। এমনকী বিডিও অফিসে ঢোকার মুখে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনাও জানানো হয় নেতাকে। দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি যখন ক্রমশ জটিল হচ্ছে, সে সময় মুখে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার ব্যাপারে বার বার সতর্ক করছে স্বাস্থ্য দফতর। অথচ সেই বিধি মানা হল না শাসক দলের কর্মসূচিতেই।

আমপানের কিছুদিন পরে করোনায় আক্রান্ত হন তরুণ। চণ্ডীপুর কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসার পরে কয়েকদিন আগেই সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। এ দিন তাঁর সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে বাড়ি থেকে বিডিও অফিস পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার বিশাল মিছিল বেরোয়। মিছিলে অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। ছিল না সামাজিক দূরত্ব বিধি মানার বালাই। যা দেখে এলাকার মানুষজনের প্রশ্ন, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এই অবস্থায় যেখানে কঠোর ভাবে সতকর্কতা বিধি মেনে চলা দরকার, সেখানে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের এমন আচরণে করোনা নিয়ে আতঙ্ক বাড়বে। কেন এ সব আটকানো হল না সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

এদিন বিডিও অফিসে অভ্যর্থনা সভায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌমিতা দাস, বিডিও মনোজ মল্লিক সহ বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধান, আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী মহিলারা উপস্থিত ছিলেন। মূলত যাঁদের উদ্যোগে করোনা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ হয়ে থাকে, তাঁরাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় করোনা প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড সেই তৃণমূল নেতা তরুণ জানার দাবি, ‘‘এক মাসের বেশি সময় অসুস্থ থাকায় প্রশাসনিক কাজকর্ম থেকে দূরে ছিলাম। এদিন উন্নয়ন মিটিংয়ে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। স্থানীয় মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে অভ্যর্থনার আয়োজন করেছিল।’’ যদিও দেশপ্রাণ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিরাজ গুড়িয়ার দাবি, ‘‘ব্লক প্রশাসন ও একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান উপস্থিত থেকে যে ভাবে সংবর্ধনা জানানো হল, তা লজ্জাজনক ঘটনা। এ ধরনের কর্মসূচি সম্পর্কে সংগঠন কিছুই জাননত না।’’

এমন ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের কর্মসূচিতে স্বল্প সংখ্যক কর্মী উপস্থিত থাকে এবং তারা মুখে মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার পরেও তাঁদের নামে মামলা করে পুলিশ। অথচ তৃণমূল তথা শাসক দল যে ভাবে এ দিন করোনা বিধি ভাঙল তা দেখেও পুলিশ চুপ করে বসে রইল। পুলিশ-প্রশাসন যে রাজ্য সরকারের দলদাসে পরিণত এর থেকেই তা প্রমাণ হয়।’’

পুলিশের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) অরবিন্দ কুমার আনন্দকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Kanthi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE