তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দোকানে। ধৃত খোকন দাস (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।
তোলা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও তাঁর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল। শনিবার রাতে বন্দর শহর হলদিয়ার এই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দুই কর্মী খোকন দাস এবং বিকাশ মণ্ডলের দিকে। এমনকী ওই ব্যবসায়ীর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে টাকা লুঠেরও অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে ওই ব্যবসায়ী হলদিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আর রবিবার সকালেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত খোকনকে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। বিকাশের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়ার টাউনশিপ এলাকার সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে মাস পাঁচেক আগে দোকানটি ভাড়া নেন ওই ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, দোকান খোলার পর থেকেই তৃণমূলের স্থানীয় কার্যালয় থেকে বারবার টাকার জন্য তাড়া দেওয়া হচ্ছিল। বেশ কয়েক মাস ৫০০ টাকা করে দিয়েওছিলেন তিনি। কিন্তু শনিবার হঠাৎ খোকন আর বিকাশ প্রথমে ওই ব্যবসায়ীকে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করতে বলে। সেখানে ওই ব্যবসায়ীকে জানানো হয়, এ বার আর ৫০০ নয়। দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা। ওই ব্যবসায়ী জানান, এক সাথে এত টাকা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সেই সময়ে তাঁকে ছাড় দেওয়া হলেও রাত ৯টা নাগাদ ফের দোকানে ১০-১২ জন দুষ্কৃতীকে নিয়ে হাজির হয় খোকন আর বিকাশ। সেই সময় দোকান বন্ধ করছিলেন ওই ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ওরা যে টাকা চেয়েছিল তা দিতে পারব না বলতেই আমাকে মারতে শুরু করে। আমার স্ত্রীও সেই সময় দোকানে ছিলেন। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়।’’ ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘খুব খারাপ ভাষায় কথা বলছিল ওরা। এমনকী আমার পাঁচ বছরের মেয়েটা দোকানে ঘুমোচ্ছিল। তাকেও হিড়হিড় করে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়।’’ এমনকী ওই ব্যবসায়ীর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে খোকন দোকানের বাক্সে রাখা ৫ হাজার টাকাও নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। এরপর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে মাখনবাবুর বাজারে আসেন ওই ব্যবসায়ী। সেখান থেকেই তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর হলদিয়া থানায় গিয়ে খোকন ও বিকাশের নামে শ্লীলতাহানি এবং স্বামীকে মারধর-হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খোকন আর বিকাশ এলাকার বহু ব্যবসায়ীর থেকেই এভাবে তোলা আদায় করে। না দিলেই জোটে মারধর, হুমকি। কিন্তু হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত ওই দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কেউই মুখ খোলার সাহস পান না। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল অবশ্য এই তোলা আদায়ের অভিযোগ মানছেন না। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ওই ব্যবসায়ীর দোকান যে জায়গায় সেটা পুরসভার। পুরসভার অনুমতি না নিয়ে ব্যবসা করছিলেন ওই ব্যক্তি।’’ কিন্তু তার জন্য তো পুরসভা ব্যবস্থা নেবে। শাসকদলের নেতারা এসে ব্যবসায়ীদের মারধর করলেন কেন? উত্তর মেলেনি। তবে খোকন আর বিকাশ তৃণমূলেরই এটা মেনে নিয়ে সংযোজন, ‘‘আইন নিজের পথেচলবে। তবে আগে আদৌ ঘটনাটি ঘটেছে কি না তার তদন্ত প্রয়োজন। দলীয় কর্মী হলেও দোষ করলে শাস্তি পেতেই হবে।’’
অবশ্য শনিবারের অভিযোগের পরই রবিবার খোকনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পলাতক বিকাশের সন্ধানেও তল্লাশি চলছে।
আর মাসখানেক পরই বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীদের অভিযোগ, তার আগে নিরপেক্ষতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতেই তড়িঘড়ি করে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, দলের কারও নাম অপরাধের মামলায় নাম জড়ালে, তাঁরা ব্যবস্থা নেন না, এমনটা নয়। ২৭ ডিসেম্বর মালদহের ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি পবিত্র রায়ের গুলিতে দুই বালকের প্রাণ যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তিনি গ্রেফতার হন। তার পর দিনই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এমনকী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পেটে লাথি মারায় অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল নেত্রী পুতুল গড়াইকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
অবশ্য অভিযুক্তরা তৃণমূলের বলে মানতে নারাজ তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে সুশাসন রয়েছে বলেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রচারমাধ্যম জোর করে ওই দুষ্কৃতীদের তৃণমূলের কর্মী বানিয়েছে। ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy