ডাকঘরের সামনে লম্বা লাইন। —ফাইল চিত্র।
তমলুক শহরের ডহরপুর এলাকার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া অরিজিৎ সামন্তের কাছে ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই চিঠিটি অরিজিতের বদলে পৌঁছে গিয়েছিল একই নামে পাশের ধারিন্দা এলাকার এক যুবকের কাছে। তবে অরিজিতের ভাগ্য ভাল, কয়েকদিন পর সেই চিঠি পৌঁছেছিল তাঁর হাতে।
অরিজিতের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিধান সামন্ত বলেন, ‘‘ডাকযোগে চিঠি আসার ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে। পাশাপাশি, টেলিভিশন, ফ্রিজ-সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সামগ্রী মেরামতির জন্য সংস্থার তরফে পাঠানো কর্মীদের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছতে সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই অব্যাহত।’’
বিধানবাবুর মত ভুক্তভোগী তমলুক প্রধান ডাকপিওনেরাও। ডাকঘরের এক কর্মী বলেন, ‘‘শহরের এক বাসিন্দার নামে পাঠানো চিঠিতে ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে পার্বতীপুর, তমলুক। সঙ্গে পিনকোড। কিন্তু শহরের পার্বতীপুর এলাকায় ওই ব্যক্তির ঠিকানা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কারণ পার্বতীপুর এলাকাতেই পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড রয়েছে। রয়েছে কয়েকশো বসতবাড়ি। কিন্তু এলাকার কোনও রাস্তারই নাম উল্লেখ নেই। ফলে ঠিকানা খুঁজে পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।’’
তবে শুধু পার্বতীপুর কিংবা ডহরপুর নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের সদর তমলুক শহরের অধিকাংশ রাস্তার নামকরণ না থাকায় বাসিন্দাদের ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে বলে ডাককর্মীদের অভিযোগ। এই অবস্থায় অনেকে সঠিক ঠিকানায় চিঠি যাতে পৌঁছয় সে জন্য প্রাপকের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করছেন।
দেড়শো বছরের বেশি পুরনো তমলুক শহরে পুরসভা গঠনের পরেও অধিকাংশ রাস্তার নামকরণ না হওয়ায় পুরবাসীরা অনেকেই বিস্মিত। শহরের বাসিন্দাদের মতে, ঐতিহ্যবাহী এই শহরে বহু পাকা রাস্তা রয়েছে। কিছু নতুন পাকা রাস্তাও হয়েছে। শহরের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বহু বিপ্লবী ও মহাপুরুষের স্মৃতি। তাই কলকাতার মত এই শহরের রাস্তাগুলিও বিপ্লবী ও মহাপুরুষদের নামে নামকরণ করার সুযোগ ছিল। তাঁদের অনুযোগ, স্রেফ পুরসভা উদ্যোগী না হওয়াতেই অধিকাংশ রাস্তার নামকরণ হয়নি। ওই কাজ হলে নতুন প্রজন্ম যেমন শহরের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী হতেন, তেমনই ডাকযোগে কিংবা কুরিয়ারে চিঠি পৌঁছনোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হত না।
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে তমলুকের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘শহরের অধিকাংশ রাস্তার নামকরণ নেই এটা ঠিক। এতে চিঠিপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাও হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে পুরসভায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ করা হবে।’’
তমলুক প্রধান ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বাসিন্দা ও বিভিন্ন অফিস মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাধারণ ডাকে হাজার দেড়েক চিঠি, স্পিড পোস্টে ৬০০টি ও রেজিস্ট্রি ডাকে অন্তত ৪০০ চিঠি আসে। এ ছাড়াও অনলাইনে কেনাকাটা ও পার্সেল ডাকে আসা বিভিন্ন জিনিসপত্র নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছতে হয়। এ সবের জন্য ৬ জন ডাকপিওন আছেন। কিন্তু ডাককর্মীদের অভিযোগ, অধিকাংশ চিঠির ঠিকানায় শুধু প্রাপকের নাম ও এলাকা, ওয়ার্ড নম্বর উল্লেখ থাকলেও রাস্তার নাম থাকায় নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজতে হয়রান হতে হয়। এ ভাবে চিঠি বিলি করতেও প্রচুর সময় চলে যায়। শহরের বিভিন্ন রাস্তার নামকরণ এবং বাড়ির নম্বর থাকলে নির্দিষ্ট ঠিকানায় চিঠি পৌঁছে দেওয়া অনেক সহজ হত।
তমলুক প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাষ্টার অনুপ ভক্তার কথায়, ‘‘শহরের রাস্তাগুলির নামকরণ হলে তো ভালই হয়। এতে ডাককর্মীদেরও আরও দ্রুত চিঠি বিলি করতে সুবিধা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy