নারায়ণগড় বিধানসভায় প্রচাের দেব। নিজস্ব চিত্র।
দলনেত্রী কাকুতি-মিনতি থেকে আবদার, কিছুই করতে ছাড়েননি। তাতেও রক্ষা নেই। তাই শেষবেলায় সূর্যকান্ত মিশ্রের খাসতালুক নারায়ণগড়ে চলল তারকা প্রচার। বেলদায় প্রচারে এলেন তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ দেব।
বেলদা বাসস্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে মিছিল তখন এগোচ্ছে বাইপাসের দিকে। রাস্তার দু’দিকে দাঁড়িয়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা। মিছিলের লেজটা একটু একটু করে বাড়ছে! যারা একটু আগেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল, মিছিলের মাথাটা পেরোনোর পরে তারা লেজের দিকে ঢুকে পড়ছেন। মিছিলে কেন?
কলেজ পড়ুয়া অঙ্কিতা চন্দের জবাব, “দেবদাকে দেখার জন্যই যাচ্ছি। শুনেছিলাম, মিছিলে দাদা থাকবে! পরে শুনলাম, মিছিলে নেই। তবে মিছিল শেষে যেখানে সভা হবে সেখানে দেবদা থাকবে।” মিছিল যখন বাইপাসের ধারে সভাস্থলে পৌঁছল তখন সেখানে গিজগিজে ভিড়। সকলেই প্রিয় নায়ককে কাছ থেকে দেখতে চায়, ছুঁতে চায়।
শনিবার বিকেলে বেলদার এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। মিছিল শেষে সভাও করেন তিনি। কিছু পরে একই মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখেন সাংসদ মুকুল রায় এবং দীপক অধিকারী ওরফে দেব। এ দিন প্রথম নয়, এর আগেও তারকা প্রচার করেছে তৃণমূল। দলের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে এসেছেন টলিউডের নায়ক- নায়িকারা। এসেছেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখেরাও। কিন্তু দেব যেন একটু বেশি উজ্জ্বল! তাই ঘাটালের সাংসদকে শেষ প্রচারে হাজির করতে সব চেষ্টা করেছিলেন নারায়ণগড়ের তৃণমূল প্রার্থী প্রদ্যোত ও জেলা নেতারা।
খালি হাতে ফেরাননি দেব। প্রচার শেষের নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দেড়েক আগেই তিনি বেলদায় হাজির হয়ে যান। মুখে হাসি ফোটে তৃণমূল প্রার্থীর! বলেন, “মিছিল-সভার ভিড়ই দেখিয়ে দিল, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন!” দলের মধ্যেই অবশ্য গুঞ্জন, ভিড় হয়েছে ঠিকই, তবে এই ভিড়ের জন্যও তো সেই পাশের নয়াগ্রাম থেকে লোক আনতে হল!
এ দিনের সভায় শুভেন্দু বলেন, “প্রদ্যোতদাকে জিতিয়ে এই আসনটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিন। উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তৃণমূলের কোনও বিকল্প নেই। আমি বলছি, এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫০ আসন পাবেন!” মুকুলের কটাক্ষ, “সূর্যবাবুর শখ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী হবেন! আপনারা জেনে রেখে দিন, নির্বাচনের পরে সিপিএম নামক দলটার অবলুপ্তি ঘটবে। এটা বিরল প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হবে।”
আর ‘খোকাবাবু’-র বক্তব্য সেই ধরাবাঁধা! গরমে ঘামছিলেন। রোদচশমা খুলে বেশ কয়েকবার রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন। ভিড়ে থাকা মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, “এত গরমে আপনারা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছেন, তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। মন থেকে আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, প্রচুর গরম। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।” সঙ্গে জানালেন, “মেদিনীপুর আমার মনের খুব কাছে। এই জেলাটা সবচেয়ে প্রিয় জেলার মধ্যে একটা। যখন এখানে পা দিই তখনই ভাবি, বস জেলার জন্য কিছু করতে হবে।”
তিনি যোগ করলেন, “আমি কলকাতা থেকে ভোট চাইতে আসিনি। আপনারা আমার চেয়ে অনেক বেশি রাজনীতি বোঝেন। তবে একটা কথা বলব, আমি দিদিকে খুব ভালবাসি। নারায়ণগড়ের মানুষ রাজনৈতিক সচেতন মানুষ। প্রদ্যোতদা আমার খুব কাছের মানুষ। আমি যখন লোকসভার ভোটটা লড়ছিলাম, সাংসদ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন উনি আমার পাশে ছিলেন। সব রকম সহযোগিতা করেছেন।” এরপর দলের প্রার্থীর দিকে তাকিয়ে তাঁর মন্তব্য, “প্রদ্যোতদা থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। তখন বলতে পারিনি। এখন বলে দিলাম!”
দেব মঞ্চ ছাড়তে মুহূর্তে পাতলা হয়ে যায় ভিড়। বেলদা বাইপাসের কাছের এলাকাটা ফের আগের চেহারায় ফেরে। মঞ্চ থেকে নেমে তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দকেও বলতে শোনা যায়, “দেবভক্তের সংখ্যা যে খুব কম নয়, আজ বেশ বুঝলাম! একটা বাচ্চা মেয়ে দেবের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য কি আকুতিই না করল!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy