টোটোতে সওয়ার যাত্রীরা।
রাজ্যের অন্যত্র বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ‘টোটোরাজ’। আর তা নিয়ে অটো ও রিকশাওয়ালাদের ক্ষোভের কথাও শোনা যাচ্ছিল। এ বার সেটা দেখা গেল ঘটাল শহরেও।
মাস দেড়েক আগে এই শহরে চলতে শুরু করেছে টোটো। প্রথমে গোটা শহরে মাত্র দু’টি টোটো চলছিল। কিন্তু এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২২। ঝুঁকির যাত্রা জেনেও মানুষের মধ্যে বাড়ছে টোটোয় চড়ার ঝোঁক।
কারণ অনেক রকম। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, অটো আর রিকশার মাতব্বরি অনেকদিন সহ্য করেছি। বড় রাস্তা ছাড়া অটো মেলে না। আবার রিকশা স্ট্যান্ডে গিয়ে রিকশা পাওয়া গেলেও তারা ভাড়া চায় ইচ্ছা মতো। বিপদ বুঝলে তাদের আবদারও বাড়তে থাকে। তারচেয়ে টোটো ভাল। বাড়ির সামনে থেকেও পাওয়া যায়। আবার অনেকেই নিয়ে রেখেছেন টোটো চালকের ফোন নম্বর। তেমন তেমন প্রয়োজনে ফোন করলেই পাওয়া যায় টোটো। অটো যেমন ভর্তি না হলে যেতে চায় না, টোটো তেমন নয়। একজন যাত্রী নিয়েও চলতে শুরু করে।
আর এতেই মাথায় হাত অটো মালিক থেকে রিকশা মালিকদের। দেড় মাসে যে ভাবে বেড়েছে টোটোর বাড়বাড়ন্ত, তাতে উৎসাহ পাচ্ছেন আরও অনেকেই। ইতিমধ্যেই আরও অনেকে চাইছেন টোটো কিনে ব্যবসা করতে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে অটো, রিকশা এমনকী ট্রেকার মালিকদের।
ঘাটালে আগে অটো এবং রিকশাই ছিল একমাত্র ভরসা। শহরের নির্দিষ্ট দু’তিন জায়গায় অটো বা রিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে। ফলে শহরের মধ্যে বা অন্যত্র কোথাও যাতায়াত করতে হলে স্ট্যান্ডে এসে অটোতে বা রিকশায় উঠতে হতো। অনেকেই বলছেন এখন বাড়ি থেকে বেরিলেই টোটো পাওয়া যায়।
আবার অনেকের সাফ কথা, এতদিন উপায়ান্তর ছিল না, তাই অটোই ছিল ভরসা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এক ধাক্কায় খদ্দের কমছে রিকশা বা অটোর।
ঘাটাল-রানীচক অটো ইউনিয়নের সম্পাদক বনবিহারী পলিতা বলেন, “ঘাটাল শহর ও সংলগ্ন এলাকা গুলিতে মোট ৭০টি অটো চলে। সরকারকে কর দিয়ে নির্দিষ্ট রুট মেনে এতদিন এই ব্যবসা আমরা করে আসছি। কিন্তু টোটোর জন্য এখন আর ব্যবসায় লাভ নেই। তিনিই জানালেন, শহরাঞ্চল ছাড়াও গোটা ঘাটালে মোট ১৬০টি অটো চলে। সারাদিনে অন্তত তিন থেকে চারবার যাতায়াত করলে যা যাত্রী হতো, তাতে ভালই লাভ ছিল। সেখানেই ভাগ বসাচ্ছে টোটো।
অন্য দিকে ঘাটাল শহর রিকশা মালিক ও চালক সংগঠনের সম্পাদক সুকুমার রুইদাস বলেন, “এখন এমনই অবস্থা যে দিনের শেষে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। অনেকেই ভাড়ায় গাড়ি চালান, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ।’’
সুকুমারবাবু ও বনবিহারীবাবু দু’জনেই মোটামোটি একই অবস্থানে থেকে দাবি করেন, টোটো চালানোর আগে সরকারি অনুমতি নেওয়া হোক। সব দিক বিবেচনা করে প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট রুট এবং সময় সীমা বেঁধে দিক। প্রশাসন কঠোর না হলে আমাদের পুরানো এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
চিন্তায় রিকশা চালকরা। ঘাটালে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এ ব্যাপারে ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস চন্দ্র ঘোষ আশ্বাস দেন বোর্ড গঠন হলেই তিনি এই সমস্যা সমাধান করবেন। তিনি বলেন, “টোটো মালিকদের নিয়ে বৈঠক করব। একটি নির্দিষ্ট রুট এবং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করব।’’
এ দিকে ঘাটালের বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিত বলেন, “শুধু ঘাটাল শহরেই নয়, ব্লকের প্রত্যান্ত গ্রামেও এখন টোটো চলাচল শুরু করেছে বলে খবর পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি দেখছি।”
ব্যাটারি চালিত শব্দ বিহীন টোটো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় চলছে। যদিও বড় রাস্তা বা পাড়ার অলিগলি সর্বত্রই ঝুঁকি থেকেই যায়। সে কথা মানছেন যাত্রীরাও। তবু স্বাচ্ছন্দ্য ও সহজলভ্যতার কারণে টোটোর দিকেই ঝুঁকছেন তাঁরা। ঘাটাল শহরের কুশপাতার বাসিন্দা মিতালি মিত্র, কৃষ্ণনগরের অমিতা বেরা, গম্ভীরনগরের অশোক পাল, আড়গোড়ার সুদীপ ধাড়াদের কথায়, ঘাটালে রিকশা ভাড়া খুব বেশি, তাও চাইলেই পাওয়া যায় না। অটোর অবস্থাও একই। এ দিকে টোটো শহরের ১৭টি ওয়ার্ডের প্রায় সব জায়গায় সকাল থেকেই যাতায়াত করছে। প্রয়োজন হলেই পাওয়া যাচ্ছে। ফলে টোটোই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy