ফাইল চিত্র।
তিন দিনের মধ্যে তিন পর্যটকের মৃত্যু। যা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে দিঘায় সমুদ্র স্নান এবং নজরদারির বিষয়টিকে।
দু’দিন আগেই গত সোমবার দিঘার সমুদ্রে স্নান করতে নেমে মৃত্যু হয়েছিল দুই পর্যটকের। বুধবারও সৈকত শহরে মারা যান আরও এক পর্যটক। পুলিশের দাবি, স্নান করতে নেমে নয়, প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কারণে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত চন্দন মুখোপাধ্যায় (৫৮) উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর থানার কাঁচরাপাড়ার শহিদনগরের বাসিন্দা। কাঁচড়াপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কর্মী চন্দনবাবু কয়েকদিন আগে স্ত্রী নিবেদিতাদেবী, ছেলে চিরন্তন, মেয়ে চন্দ্রানী, জামাই এবং নাতনীর সঙ্গে দিঘা ঘুরতে গিয়েছিলেন। এ দিন ভরা জোয়ারের জন্য সকাল থেকেই সমুদ্রে জলোচ্ছাস ছিল। তা দেখতে চন্দনবাবুরা ওল্ড দিঘার বিশ্ব বাংলায় যান।
অভিযোগ, নিষেধ থাকলেও জলোচ্ছ্বাস উপভোগ করতে চন্দনবাবু গার্ডওয়ালের নীচের বাধানো ঢালু অংশে চলে যান। সেই সময় একটি বড় ঢেউ এলে চন্দনবাবু নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যান। ঢেউয়ের স্রোতেই তিনি তলিয়ে যান বলে পুলিশের দাবি। তাঁর ছেলে চিরন্তন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাবা পা ভেজানোর জন্য নীচের ঢালু অংশে গিয়েছিলেন। ঢেউয়ের তোড়ে পা পিছলে তিনি পড়ে যান।’’
প্রবল জলোচ্ছাসের মধ্যে গার্ডওয়ালের উপর বসা বা দাঁড়ানো নিষেধ বলে পুলিশ প্রচার করে। তলে নজরদারিও। তা এড়িয়ে চন্দনবাবু কীভাবে ওখানে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নজরদারির খামতি নিয়েও অভিযোগ করেছেন অন্য পর্যটকেরা।
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, নুলিয়া ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। তাঁরা অন্য পর্যটকদের পাশাপাশি চন্দনবাবুকেও গার্ডওয়ালের কাছ থেকে সরিয়ে দেন। পুলিশের দাবি, পরে চন্দনবাবু ২ নম্বর ঘাটের দিকে যান। সেখানে হঠাৎ ফের গার্ডওয়ালের নীচে গিয়েই বিপত্তি ঘটান। তাঁর পরিবারের চিৎকারে কাছে থাকা নুলিয়ারা ছুটে যান। কিন্তু সমুদ্রের প্রবল ঢেউ চন্দনবাবুকে নিমেষের মধ্যে টেনে নেয়। শেষে ওল্ড দিঘার সি হক গোলার ঘাটের কাছ থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন নুলিয়ারা। দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা চন্দনবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে দিঘা মোহনা থানার পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়।
ওল্ড দিঘার দোকানদার বিপ্লব মাইতি বলেন, ‘‘এ দিন সকালে নিষেধ করা সত্ত্বেও অনেক পর্যটক গার্ডওয়ালে উঠেছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।’’ পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “সমুদ্র উত্তাল হলেই আমরা মাইকে ঘোষণা করি। গার্ডওয়ালের কাছে যাওয়া বা বসতে নিষেধ করি। নুলিয়া ও নিরাপত্তা কর্মীরাও সতর্ক থাকেন। কিন্তু কিছু পর্যটক শোনেন না।’’
গোটা ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথায়, ‘‘এ দিন চন্দনবাবুকে নুলিয়ারা সরিয়ে দেওয়ার পরেও তিনি শোনেনি। আমাদের কাছে পর্যটকরা অতিথি। কিন্তু এমন দুর্ঘটনা রুখতে এবার থেকে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার
করাও হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy