সুবর্ণরেখার পাশাপাশি বালি তোলায় বিপন্ন কংসাবতীও। দাসপুের। ফাইল চিত্র
বালি বোঝাই ট্র্যাক্টর তো কতই আটক হয়। সাঁকরাইলের কুশমি সেতুর কাছ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি ট্র্যাক্টর আটক হতেই শোরগোল শুরু হয়েছে।
শোরগোলের কারণ, ট্র্যাক্টরটির মালিক ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মনোরমা পাত্রের স্বামী মৃণালকান্তি। আর সেই ট্র্যাক্টরে বালি নিয়ে যাচ্ছিলেন মনোরমার দেওরের ছেলে অরিন্দম পাত্র। ট্র্যাক্টর আটক করে প্রশাসন মামলা রুজু করেছে। জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এতেই রুষ্ট জেলা পরিষদের শিশু, নারী উন্নয়ন, জনকল্যাণ ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ মনোরমা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বেআইনি বালি গাড়ি ধরার নামে ভূমি দফতরের একাংশ আধিকারিক বৈধ কারবারিদের হয়রান করছে।’’
ভূমি দফতরের এক আধিকারিকও স্বীকার করেছেন, সংশ্লিষ্ট ট্র্যাক্টরের চালক লাল্টু দেহরির কাছে সিও (পরিবহণ-অনুমতিপত্র) ছিল। কিন্তু তিনি যে সিও-টি দেখিয়েছিলেন তা ছিল সকালের। অথচ বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সন্ধ্যায়। অরিন্দমের দাবি, মঙ্গলবার সকালে সাঁকরাইলের নৈহাটের একটি বৈধ খাদানের বালি ট্র্যাক্টরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কুলটিকরির দিকে। চালকের কাছে বৈধ সিও ছিল। কিন্তু মাঝপথে ঢেরাছেঁড়া এলাকায় ট্র্যাক্টরে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা যায়। নিকটবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি থেকে যন্ত্রাংশ সারিয়ে এনে ট্র্যাক্টরটি চালু করতে বিকেল গড়িয়ে যায়। ট্র্যাক্টরটি কুলটিকরির দিকে যাওয়ার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ট্র্যাক্টরটিকে আটক করেন ভূমি দফতরের আধিকারিকরা। অরিন্দমের অভিযোগ, ‘‘সন্ধ্যায় চালক সমেত ট্র্যাক্টরটিকে আটক করা হলেও আমাকে খবর দেওয়া হয় পরে। ট্র্যাক্টর বিগড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভূমি আধিকারিক মানতেই চাইছেন না।’’
সাঁকরাইলে আটক হওয়া ট্র্যাক্টর। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা সফরে গিয়ে বেআইনি বালি খাদান নিয়ে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে শুরু হয়েছিল ধরপাকড়। প্রশাসনের দাবি, নিরবিচ্ছন্ন ভাবে সে প্রক্রিয়া চলছে। এ ক্ষেত্রেও জেলাশাসক আয়েষারানি বলেছেন, ‘‘বৈধ সিও না থাকায় এফআইআর করা হয়েছে। জরিমানা দিতে হবে।’’ প্রশাসনিক সক্রিয়তা মেনে নিয়েও মঙ্গলবারের ট্র্যাক্টর আটক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে শাসক দলের অন্দরে। কারণ, গোষ্ঠী সমীকরণ। তৃণমূলের অন্দরে সাঁকরাইল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সোমনাথ মহাপাত্রের সঙ্গে মনোরমার সম্পর্ক ‘মধুর’। তৃণমূল সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে একটি বালি খাদান নিয়ে গোলমালের জেরে সোমনাথের মহাপাত্রের বিরুদ্ধে এলাকায় বালি মাফিয়াদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন দলেরই একাংশ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সোমনাথকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়। দায়িত্ব পান মনোরমা-ঘনিষ্ঠ তপন পট্টনায়েক।
বালির বাঁধ
• রাতের অন্ধকারে বালি নিয়ে বেরিয়ে যায় লরি
• একটাই সিও, তা দেখিয়েই বারবার পরিবহণ
• ভূমি দফতরে লোক কম, সিও পাঞ্চিং হয় না
• রাস্তায় ভূমি দফতর ও পুলিশের নজরদারি থাকে।
• গত দু’মাসে রাজস্ব আদায় প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা
(তথ্যসূত্র: ভূমি রাজস্ব দফতর)
গত পঞ্চায়েতের আগেই অভিযোগ ওঠে, বিজেপিকে ‘মদত’ দিচ্ছেন সোমনাথ। ভোটে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। কিন্তু তারপর কালীঘাটের বৈঠক থেকে সোমনাথকেই ফের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেন মমতা। গড়শালবনিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির পাল্টা সভা করতে আসছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পার্থ আগামিকাল, শনিবার সভা করবেন। তার আগেমনোরমার আত্মীয়ের বালি বোঝাই ট্র্যাক্টর আটক হওয়ায় জল্পনা জোরদার হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। সোমনাথ অবশ্য মনোরমার পাশেই দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, ‘‘মনোরমাদেবী বালি ব্যবসায় যুক্ত নন। তাঁর দেওরের ছেলের বিষয়ে আমার জানা নেই।’’ পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, ‘‘দলের কর্মী-সমর্থক যেই হোন না কেন, কেউ বেআইনি কাজে যুক্ত থাকলে দল হস্তক্ষেপ করবে না।’’ মনোরমা অবশ্য জানিয়ে রেখেছেন, ভূমি দফতরের একাংশের বিরুদ্ধে ‘যথাস্থানে’ অভিযোগ জানাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy