ট্রেনের দেখা নেই, অপেক্ষায় বৃদ্ধ। শুক্রবার মেচেদা স্টেশনে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস (ইনসেটে) মৃত আলেম খান।
কেউ যাচ্ছিলেন কলকাতায় চিকিৎসার জন্য, ব্যবসার কাজে কারও গন্তব্য ছিল খড়গপুর। প্রায় চার ঘণ্টার রেল অবরোধে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। মেচেদা স্টেশনে দুর্ঘটনার জেরে শুক্রবার সকালে কলকাতা-খড়্গপুর শাখায় দুর্ভোগে পড়লেন কয়েক হাজার যাত্রী।
এ দিন সকালে মেচেদা স্টেশনের কাছে রেল লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বছর পঁয়তাল্লিশের আলেম খানের। সামান্য চিকিৎসার সুযোগও মেলেনি, এই অভিযোগ তুলে সকাল ৮ থেকে দুর্ঘটনাস্থলের কাছে মৃতদেহ রেখে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে মেচেদা স্টেশনের কাছে সবকটি লাইনের উপর রেললাইনেরই লোহার পাতের টুকরো ফেলে ট্রেন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়। শুরু হয় ট্রেন বিভ্রাট। মেচেদা স্টেশনের কাছেই আটকে পড়ে হাওড়া এবং খড়গপুরগামী দু’টি লোকাল ট্রেন। অবরোধের জেরে কোলাঘাট স্টেশনের কাছে থমকে যায় হাওড়া থেকে দিঘাগামী এক্সপ্রেস, হাওড়া থেকে টিটলাগড়গামী ইস্পাত এক্সপ্রেস। মেচেদা স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা, খড়্গপুর বা মেদিনীপুরে যাঁরা রোজ কাজে যান, এমন বহু মানুষ এ দিনের টানা অবরোধে নাকাল হন।
অবরোধ যখন চলছে তখন মেচেদা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, ওভারব্রিজে থিকথিকে ভিড়। সকলেই অপেক্ষা করছেন অবরোধ কতক্ষণে ওঠে, স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচস। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে বাসে চেপে কলকাতা, খড়্গপুর, মেদিনীপুর রওনা হয়ে যান। পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসার পরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে আলোচনা চলে। শেষে সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল।
প্রায় চার ঘণ্টার অবরোধে স্টেশনে এবং ট্রেনের ভিতরে অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার মানুষের তখন গলদঘর্ম দশা। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করার সময় এক প্রৌঢ় অসুস্থ হয়ে পড়েন। রেল পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে মেচেদার এক নার্সিংহোমে ভর্তির ব্যবস্থা করে। এ দিন সকালে কলকাতা যাওয়ার জন্য বাসে চেপে মেচেদা স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেলেন নন্দীগ্রামের তেরপেখ্যার বাসিন্দা বশিষ্ঠ দে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য বাস ধরেন তিনি। বশিষ্ঠ বলেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলাম। কিন্তু অবরোধে ট্রেন তো বন্ধ। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পরেও ট্রেন চলল না। বাধ্য হয়েই ফিরে যাচ্ছি।’’
কলকাতার এক কুরিয়ার সংস্থার কর্মী মহিষাদলের বাবুরহাটের বাসিন্দা ভক্তিপদ মণ্ডল। তিনিও এ দিন মেচেদায় এসে আটকে পড়েন। ভক্তিপদের কথায়, ‘‘কলকাতা অফিস হয়ে মুর্শিদাবাদে যাওয়ার কথা ছিল। জানি না কতক্ষণে ট্রেন ফের চালু হবে, কী ভাবেই বা পৌঁছব।’’ কলকাতার বড়বাজার থেকে ব্যবসার কাজে খড়্গপুর যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ রামেশ্বররাও শর্মা। ট্রেনে আটকে পড়া রামেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘ট্রেনের ভিতরে বসে গরমে কাহিল দশা। আজ আর খড়্গপুর যাওয়া হবেনা। বাড়ি ফিরে যাব।’’
একাংশ যাত্রী ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রেল দফতর ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। মেচেদা স্টেশনে আটকে থাকা তমলুকের রাধামণির মণীন্দ্রনাথ পাত্র, কোলাঘাটের ভোগপুরের বাসিন্দা বাসুদেব মান্নার অভিযোগ, ‘‘মেচেদার মত গুরুত্বপূর্ণ এক স্টেশনে দুর্ঘটনার পরে অবরোধ চললেও পুলিশ-প্রশাসন হস্তক্ষেপ করতে টালবাহনা করছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করেই সমস্যা মেটানো উচিত ছিল। রেল দফতরের গাফিলতিতেই আমাদের এই ভোগান্তি হল।’’
রেলের তরফে অবশ্য গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy