Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষুব্ধদের বুঝিয়ে মান ভাঙাচ্ছে বিজেপি

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিজেপিতে। বিক্ষুব্ধদের অনেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও জমা দিয়েছেন। আজ, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই পরিস্থিতিতে তাই রেলশহরের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীদের বোঝানোর কাজ শুরু করল বিজেপি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে বলেও দল সূত্রে খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিজেপিতে। বিক্ষুব্ধদের অনেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও জমা দিয়েছেন। আজ, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই পরিস্থিতিতে তাই রেলশহরের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীদের বোঝানোর কাজ শুরু করল বিজেপি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে বলেও দল সূত্রে খবর। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে ফোন করা হয়েছে। তবে ওই নির্দল প্রার্থীরা এখনও পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানে অনড়। নির্দল প্রার্থীদের অধিকাংশ আবার বিজেপির বিভিন্ন পদে রয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তাঁদের তালিকা তৈরি করে বহিষ্কার করবে বিজেপির শহর কমিটি।

গত লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়ায় মিশ্র ভাষাভাষীর শহর খড়্গপুরে চমকপ্রদ ফল করে বিজেপি। খড়্গপুর সদর বিধাসভায় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিজেপি প্রার্থীই এগিয়ে ছিলেন। এরপর থেকেই রেলশহরে গেরুয়া শিবিরের বাড়বাড়ন্ত হয়। পুরভোটে খড়্গপুরকে পাখির চোখ করেন দলীয় নেতৃক্ব। আর এরপরই শুরু হয় নতুন-পুরনো সংঘাত। দলের প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই না পেয়ে পেয়ে একাংশ বিজেপি কর্মী ক্ষুব্ধ হন। প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা এবং রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভও দেখানো হয়। বিক্ষুব্ধদের বক্তব্য, পুরনোদের বদলে সদ্য দলে আসা প্রভাবশালীদের প্রার্থী তালিকায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে ১৮ জন বিজেপি কর্মী নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিক্ষোভের পিছনে থাকা ১০ জনকে প্রাথমিক ভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। বুঝিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো না গেলে দলবিরোধী কাজের জন্য শহর কমিটি তাঁদের বহিষ্কার করবে বলে ঠিক হয়েছে। বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা জানান, তাঁরা এমন ১০ জনকে বেছেছেন, যাঁরা দলের ওয়ার্ড সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং শহর কমিটির সদস্য পদে থেকেও দলবিরোধী কাজ করেছেন। একই সঙ্গে প্রেমচাঁদের বক্তব্য, “নির্দল হিসেবে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের চার জনের কোনও জনসমর্থন নেই। তাই আমরা তাঁদের প্রার্থী হিসেবে বাছিনি। তবে এটা ঠিক কিছু মানুষ তাঁদের সঙ্গে আছে। তাই জেলা সভাপতি তাঁদের বোঝাচ্ছেন।”

বুধবার বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার পরেই দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ওঁদের স্বাভাবিক নিয়মেই বহিষ্কৃত হয়েছেন। পরে অবশ্য দেখা গিয়েছে, বিজেপির শহর কমিটির সদস্য ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অজয় চট্টোপাধ্যায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রাজীব দাসের মতো দীর্ঘদিনের কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। এলাকায় এঁদের জনভিত্তি থাকায় গেরুয়া শিবিরের ভোট কমার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এঁদের বুঝিয়ে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার আসরে নেমেছেন খোদ বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে আলোচনার জন্য ওই নির্দল প্রার্থীদের বলেছি। যদিও ওঁরা মণ্ডল সভাপতির উপর ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছে। কিন্তু আমি ও সব না ভেবে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য বলেছি।”

ফোন পেয়েছেন বলে জানাচ্ছেন বিক্ষুব্ধরাও। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণ বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা অজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেলা সভাপতি জানতে চান কেন আমি নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছি। আমি ক্ষোভের কথা জানিয়েছি। জেলা সভাপতি মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু আমার দাবি, সদ্য আসা বিজেপিতে এসে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের প্রত্যাহার করতে হবে।”

শেষমেশ এই নির্দল প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে কী ভাবে ওই ১৮টি ওয়ার্ডে বিজেপি সাফল্য পাবে সেই প্রশ্ন উঠছে। সে ক্ষেত্রে বিক্ষুব্ধদের বহিষ্কার এবং ওই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চালাবে বিজেপি। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রচারে গতি আনতে আগামী ৩১ মার্চ খড়্গপুরে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে দলের সমস্ত ওয়ার্ড সভাপতি, প্রার্থী ও এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই প্রচারের রূপরেখা তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহার না হলে প্রার্থীদের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই নির্দল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রচার চলবে বলেও বিজেপি সূত্রে খবর। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু বলেন, “৩১ মার্চ খড়্গপুরে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে প্রচারের রূপরেখা তৈরি হবে। তবে যাঁরা নির্দল প্রার্থী হয়ে দলবিরোধী কাজ করেছেন তাঁদের ওয়ার্ডের প্রচারে আমরা জোর দেব। প্রয়োজনে ওই ওয়ার্ডগুলিতে বেশি করে রাজ্য নেতাদের প্রচারে আনা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE