Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Death

প্রতিমা দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট  

পাড়ার দুর্গাদালানে শুরু হয়েছে উঁকিঝুঁকি। আর সেটাই কাল হল লালগড়ের বামাল গ্রামের সৌরভ পাত্র (১০) ও কাজল সিংহের (১১)। গ্রামের দুর্গামণ্ডপের কোলাপসিবল গেট ছুঁয়ে নির্মীয়মাণ প্রতিমা দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তাদের।

এই সেই কোলাপসিবল গেট।

এই সেই কোলাপসিবল গেট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালগড় শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০১:১৭
Share: Save:

বোধনের আগেই বিসর্জন।

করোনা আবহে এ বার পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দেরিতে। তবে মণ্ডপ ও প্রতিমা গড়ার কাজ পুরোদমে শুরু হতেই পুজোর গন্ধ লেগেছে ছোটদের মনে। পাড়ার দুর্গাদালানে শুরু হয়েছে উঁকিঝুঁকি। আর সেটাই কাল হল লালগড়ের বামাল গ্রামের সৌরভ পাত্র (১০) ও কাজল সিংহের (১১)। গ্রামের দুর্গামণ্ডপের কোলাপসিবল গেট ছুঁয়ে নির্মীয়মাণ প্রতিমা দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তাদের। দুর্ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায়।

বামাল গ্রামের স্থায়ী দুর্গা মণ্ডপের পুজোর এ বার ৭৪ তম বর্ষ। দুর্গা মণ্ডপেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। বেলাটিকরির এক মৃৎশিল্পী কাজ করছেন। তিনি রাতেও প্রতিমা তৈরি করেন। তাই অস্থায়ী ভাবে মণ্ডপ আলোকিত করার ব্যবস্থা হয়েছে। শনিবার প্রতিমা তৈরির কাজ হয়নি। কোলাপসিবল গেটও বন্ধ ছিল। বৃষ্টি থামার পরে সন্ধ্যায় দুর্গা মণ্ডপের প্রাঙ্গণে হুটোপাটি করছিল একদল খুদে। তাদের মধ্যে লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া সৌরভ ও বামাল মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী কাজলও ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী খুদেরা জানায়, সৌরভ হঠাৎই ঠাকুর দেখার জন্য দুর্গা মণ্ডপের দিকে এগিয়ে যায়। কোলাপসিবল গেট ধরে প্রতিমা দেখতে গিয়েই কাঁপতে থাকে সে। সৌরভকে টানতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় কাজলও। হইচই শুনে গ্রামের এক তরুণ এসে বাঁশ দিয়ে আলোটি ভেঙে দিয়ে বিদ্যুতের তারটি সরিয়ে দেয়। পরিজনেরা তাদের লালগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

রবিরার বামাল গ্রামে গিয়ে দেখা গেল চারিদিক থমথমে। সৌরভের মা বাসন্তী মাঝে মধ্যেই মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। সৌরভের বড় জেঠু দিলীপের আক্ষেপ, ‘‘সন্ধ্যা সোয়া সাতটা নাগাদ খবর পেয়ে যখন দুর্গামণ্ডপে পৌঁছই, তখন ভাইপো নিথর হয়ে গিয়েছে। পাশে পড়েছিল কাজলও।’’ ওই পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নিরঞ্জন পাত্রও সম্পর্কে মৃত সৌরভের জেঠু। তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যে ঘটবে কখনও ভাবিনি। জানি না পুজো আর হবে কি-না।’’ কাজলের বাবা গণেশ সিংহ পেশায় দিনমজুর। মা সরস্বতী বলেন, ‘‘রাতের খাবারের জন্য পরোটা আর আলুর তরকারি বানিয়েছিলাম। একটু ঠাকুর দেখে আসি বলে কাজল দুর্গামণ্ডপে গেল। আর ফিরল না।’’

পুলিশের অনুমান, কোলাপসিবল গেটের উপরে থাকা বিদ্যুৎবাহী তারটির মোড়ক কোনও ভাবে ঘষা লেগে ফেটে গিয়েছিল। সরাসরি তারের সংস্পর্শে কোলাপসিবল গেটটিও বিদ্যুৎবাহী হয়ে যায়। বৃষ্টির জন্য তার, কোলাপসিবল গেট এবং প্রাঙ্গণের মাটিও ভিজে থাকায় সৌরভ গেটটি ছুঁতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তাকে ছুঁয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় কাজলও। রবিবার দু’জনের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Electrocution Lalgarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE