Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বজ্রপাতে মৃত দুই, উড়ল স্টলের ছাদ

এক ঝলক দেখলে মনে হবে যেন কোনও ধ্বংসস্তুপ! এদিকে-সেদিকে উল্টে রয়েছে জিনিসপত্র। ফেটে গিয়েছে অনেক স্টলের ছাদ। মাঠে জমে রয়েছে জল। হয়েছে প্যাচপ্যাচে কাদা। চলাফেরা করাই দায়!

ঝড়ের পরে মেলা প্রাঙ্গণ। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

ঝড়ের পরে মেলা প্রাঙ্গণ। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
Share: Save:

এক ঝলক দেখলে মনে হবে যেন কোনও ধ্বংসস্তুপ! এদিকে-সেদিকে উল্টে রয়েছে জিনিসপত্র। ফেটে গিয়েছে অনেক স্টলের ছাদ। মাঠে জমে রয়েছে জল। হয়েছে প্যাচপ্যাচে কাদা। চলাফেরা করাই দায়! সোমবার সকালে মেদিনীপুর শহরে চলা রাজ্য হস্তশিল্প মেলার ছবিটা ছিল এমনই। এ দিন সকালে মেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সকলেই রোদে পসরা শুকোচ্ছেন। ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া পসরা। শুধু ক্ষয়ক্ষতি নয়, হয়েছে মৃত্যুর ঘটনাও। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের আমুরিয়ার চেচুড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে একজনের। মৃতের নাম শেখ হাবিবুর রহমান (৫৫)। তিনি চাষের কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। কেশিয়াড়ি থানার গগনেশ্বর গ্রামেও চাষের কাজ করার সময়ে বাজ পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। মৃতের নাম রাম মান্ডি (৫০)।

রবিবার গভীর রাতে আচমকাই ঝড়বৃষ্টি নামে মেদিনীপুরে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ। মেলার মাঠে স্টলগুলোয় থাকা শিল্পীরা প্রায় সকলেই তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। বজ্রপাতের আওয়াজে অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। শেখ সরফুদ্দিন নামে এক শিল্পী বেতের জিনিসপত্র তৈরি করেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ জিনিস ভিজে গিয়েছে। কবে শুকবে বলা মুশকিল।’’ তিনি জানান, তখন রাত আড়াইটে- তিনটে হবে। প্রায় সবাই ঘুমিয়েছিল। তখনই জোরে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। মাঠে শিল্পীরা ছোটাছুটি শুরু হয়ে দেন। যে যার জিনিসপত্র বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিপর্যয়ের জেরে সারা রাত ঘুম হয়নি অনেক শিল্পীর। অনেক স্টলের ছাদ ও ত্রিপল উড়ে চলে গিয়েছে। ঝড়ে উল্টে গিয়েছে মেলার মাঠের সামনে থাকা তোরণ। দিন দুয়েক আগেও ঝড়বৃষ্টিতে মেলার তাল কেটেছিল। সেই ঝঞ্ঝা সামলে ছন্দে ফেরা শুরু করতে না করতেই ফের ছন্দপতন। এ বার যেন সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। উজ্জ্বলা সরকার নামে এক হস্তশিল্পীর কথায়, ‘‘ঝড়বৃষ্টিতে পুরো মেলা ছত্রখান হয়ে গিয়েছে।’’

মেদিনীপুরের কলেজ- কলেজিয়েট স্কুল মাঠে চলছে রাজ্য হস্তশিল্প মেলা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৬০০ জন হস্তশিল্পী এখানে এসেছেন। জেলা পরিষদের ক্ষুদ্রশিল্পের কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরির আশ্বাস, ‘‘দুর্যোগে বেশ কিছু স্টলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেরামত করা হবে।’’ মেদিনীপুরের বার্জটাউন মাঠে চলছিল মাটি উৎসব। ছিল মেলা- প্রদর্শনীও। রবিবারই সেই উৎসব শেষ হয়েছে। জেলার এক কৃষিকর্তা বলছিলেন, ‘‘ভাগ্যিস, উৎসবটা রবিবার শেষ হয়ে গিয়েছে। না হলে যে কী হত। আমাদের স্টলগুলোও তো লণ্ডভণ্ড হয়ে যেত!’’

শুধু মেলা নয়, ঝড়-বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবনও ব্যাহত হয়েছে। রবিবার রাতে খড়্গপুর শহরে প্রবল ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে পড়েছে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি। ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ইন্দা এলাকার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বোসপাড়ায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় সোমবার সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। খড়্গপুর কলেজ সংলগ্ন এলাকাতেও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিপত্তি বেড়েছে। এক্ষেত্রে ‘এরিয়াল বাঞ্চ কেবল’ থাকলে এই তার ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হত বলে দাবি শহরবাসীর। ঝড়বৃষ্টিতে কেশপুরের কিছু এলাকায় গাছ ভেঙে পড়েছে। কিছু মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শালবনি ব্লকের বিষ্ণুপুরে কিছু মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেদিনীপুর সদর ব্লকেও কিছু গাছ ভেঙেছে। কিছু মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতি হয়েছে চাষেও। বৃষ্টির পরে বেশ কিছু আলু খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, এতে পোখরাজ আলুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, এই অবধি ঠিক আছে। তবে এর পরে বৃষ্টি হলে আলু চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গোয়ালতোড়, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড ব্লক এলাকায় আনাজ ও আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের দাপটে গোয়ালতোড়ে কিছু গাছ ভেঙেছে। গড়বেতা এলাকায় আলু ও ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, শসা, কুন্দরি-সহ আনাজেরও ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়।

তুলনায় ঝাড়গ্রাম জেলায় ঝড়ের দাপট ছিল কম। তবে এখানেও কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়। চাষেও সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death storm Lightning Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE