Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইউটিউব দেখেই চাষ হলদিয়ার যুবকের

অলঙ্গির বলেন, ‘‘অনেকেই আসেন আমার এই বাগান দেখতে। ইউটিউবের ভিডিও দেখে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আমতলা থেকে বীজ নিয়ে আসি। তা থেকে সব শুরু।’’

আনাজ বাগানে আলঙ্গির। নিজস্ব চিত্র

আনাজ বাগানে আলঙ্গির। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

পেশায় ঠিকা শ্রমিক। কোনও দিন প্রথাগত কৃষিকাজের শিক্ষা নেননি। কিন্তু মোবাইলে ইউটিউব দেখেই করেছেন তিনি বাজিমাত। কয়েক বিঘা জমিতে তিনি করছেন আনাজ চাষ।

হলদিয়া বন্দরের কাছেই রয়েছে বিষ্ণুরাম চক, সাওতান চক এবং পারুই পাড়া। কয়েক হাজার মানুষের বাস। স্থানীয় সূত্রের খবর, এঁদের অনেকেই বন্দরের উদ্বাস্তু এলাকার মানুষ। ওই এলাকায় নেই ভাল রাস্তা, নেই আলো, নেই নিকাশি ব্যবস্থা। খাতায় কলমে ওই জায়গা অধিগ্রহণ কড়া হয়েছে। কিন্তু পুনর্বাসন না পাওয়ায় এখনও সেই ভিটা ছেড়ে যাননি বাসিন্দারা। এঁদের মধ্যে অনেকেই শিল্প সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করেন।

ওই গ্রামেরই বাসিন্দা আলঙ্গির খান পেশায় ঠিকা শ্রমিক। থাকেন স্ত্রী, পুত্র নিয়ে। বাড়তি রোজগারের আশায় কয়েক বিঘা জমিতে তিনি আনাজ চাষ করছেন। আর সেজন্য তার নেই কোনও প্রথাগত শিক্ষা। ভরসা কেবল মাত্র ইউটিউবের ভিডিও।

আলঙ্গিরদের গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সামান্য জমিতে ঝিঙে, পটল, বেগুন, লাউ, পালং, নটে, উচ্ছে-সহ নানা আনাজ চাষ করেছেন তিনি। একটি পুকুরের উপর মাচা করেও লতানো আনাজ চাষ করেছেন ওই যুবক। আলেঙ্গিরের কথায়, ‘‘এই এলাকায় পরিকাঠামোগত কোনও উন্নয়ন হয়নি। আলোও আসেনি গ্রামে। আমি ঠিকা শ্রমিক। কাজের বাইরে এই আনাজ বাগান তৈরি করেছি। আর ইউটিউবে নানা ধরনের বাগান তৈরির পদ্ধতি দেখে এটা করতে উৎসাহিত হয়েছি।’’ অলঙ্গির বলেন, ‘‘অনেকেই আসেন আমার এই বাগান দেখতে। ইউটিউবের ভিডিও দেখে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আমতলা থেকে বীজ নিয়ে আসি। তা থেকে সব শুরু।’’

কিন্তু সহজে এই আনাজ চাষ করা সব সময় সহজ নয় বলে জানাচ্ছেন তিনি। আলঙ্গির জানিয়েছেন, এই গ্রাম সংলগ্ন এলাকাতেই রয়েছে হলদিয়া বন্দর। হলদিয়া বন্দরে ড্রেজিং চলছে। সেই ড্রেজিংয়ের পলি চলে আসে গ্রামের মধ্যে। ডুবে যায় পুকুর। নোনা জলে নষ্ট হয়ে যায় চাষের জমি। আলেঙ্গিরের কথায়, ‘‘পলি-সহ জল ঢুকে নষ্ট হয় বিঘের পর বিঘে খেত। বন্দর সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হলে ওঁরা পরিদর্শনে আসেন। ইতিমধ্যেই আবার অনেকের আনাজ বাগানে জল ঢুকেছে।’’

বর্তমানে শুধু আলঙ্গির নন, এই ধরনের আনাজ চাষ করছেন নাড়ু দাস, জয়ন্ত দাসের মতো আরও স্থানীয়েরা। আর তাঁদের চাষ করা জিনিস বিক্রি করতে দূরে কোথাও যেতে হয় না। এক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে মাখনবাবুর বাজার। সকালে তোলা আনাজের কদর মেলে বাজারে।

তাঁর এই প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে আলঙ্গিরের বক্তব্য, ‘‘একদিন মোবাইলে খেত-খামার নিয়ে ভিডিও দেখেতে দেখতেই আনাজ বাগানের আইডিয়া পাই। উদ্বাস্তু পরিবারের ছেলে হিসাবে বসে না থেকে, এই চাষই আমাকে বাঁচার প্রেরনা জোগায়। শুধু মাঝে মাঝে ভয় হয়, পলি-জলে আমার সব স্বপ্ন নষ্ট না হয়ে যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE