রাতের কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র
রাত গভীর হলেই কাঁথি শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেড়ান কয়েকজন যুবক। বাড়ির এক চিলতে বারান্দা, গুমটি দোকানের পিছনে, বাসস্ট্যান্ডের প্রতীক্ষালয়ে ওদের অপেক্ষায় থাকেন কয়েকজন। কী ব্যাপার সন্দেহজনক কিছু? মাঝে মাঝে পিছু নেয় পুলিশ। ভুল ভাঙতেই পুলিশকর্মীদের কেউ কেউ বুকে জড়িয়ে ধরেন ওই যুবকদের। কারণ, প্রতিদিন রাতে প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে, মানসিক ভাবে অসুস্থ, দুঃস্থ, আশ্রয়হীন বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন তাঁরা।
কাঁথির রামপুরের বাসিন্দা প্রদীপ মাইতির চেষ্টায় গত ১ জুন থেকে শুরু হয়েছে এই উদ্যোগ। এখন প্রায় ১৫ জনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সপ্তাহে এক দিন ডিম, দুই দিন মাছ ও বাকি দিনগুলো সব্জি , ডাল ভাত। বাগমারীর বাসিন্দা এক স্বেচ্ছাসেবক নিজের বাড়িতেই রান্না করে দেন।
এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে একটা গল্প। প্রদীপবাবু রামপুর গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি কর্মসূত্রে কলকাতার রাসবিহারীতে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘একদিন রাতের বাসে বা়ড়ি ফেরার সময় এক বৃদ্ধা কিছু খেতে চান। বিস্কুটের প্যাকেট দিলাম। কিন্তু মনে হল, বৃদ্ধার পেট ভরলো না। চার পিস রুটি ও সব্জি কিনে দিতেই প্রায় নিমেষেই সেটা খেয়ে ফেলেন সেই বৃদ্ধা।’’ সেই বৃদ্ধার কথা ভাবতে ভাবতেই প্রদীপবাবুর মাথায় একটা সংস্থা তৈরির ভাবনা আসে। জুটে যান কয়েকজন যুবক এবং আরও কয়েকজন সহৃদয়। শুধু কাঁথি নয়। কলকাতাতেও চালু হয়েছে এই উদ্যোগ।
ওই সংস্থার সদস্যদের দাবি, নিজেরা চাঁদা দিয়েই তাঁরা আপাতত প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে, আশ্রয়হীনদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু বর্ষার সময় এ কাজ কীভাবে সম্ভব হবে? ওই সংস্থার এক সদস্য দেবু মাইতির কথায়, ‘‘দিনে এমন খাওয়ার দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে কিছু অসুবিধা রয়েছে। কী সেই অসুবিধা? ওই সদস্য জানালেন, অসহায় মানুষগুলো দিনে নিজের খেয়াল খুশি মত অন্য জায়গায় চলে যায়। আবার বাসস্ট্যান্ডের প্রতীক্ষালয় কিংবা বাড়ির খোলা বারান্দায় রাত কাটানো মানুষগুলোকে দিনের আলো ফোটার আগেই ছেড়ে দিতে হয় সেই জায়গা। ফলে খাওয়ার দিতে হয় রাতেই। আর এক সদস্য সুভাষ নায়কের কথায়, ‘‘রাতে অনেক সময় টহলরত পুলিশ ভুল বুঝে সন্দেহবসত জেরা করে। যখন দেখে আমরা খাওয়ার দিচ্ছি , তখন বাহবা দেন। কেউ কেউ বুকে জড়িয়ে ধরেন।’’
প্রতিদিন রাতে এই কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? প্রহ্লাদ মাইতি নামে এক সদস্যের কথায়, ‘‘গভীর রাতে অসহায় মানুষগুলো যখন সজল চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসেন, তখন সব কষ্ট ভুলে যাই। সেই অসহায় মুখগুলো আমাদের প্রতিদিনের প্রেরণা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy