Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গলে হাতি, খোঁজ পেতে ছাগলের গলায় ঘণ্টা!

একই সঙ্গে হাতি এবং ছাগলের খোঁজ পেতে ভরসা এখন ঘণ্টাধ্বনিই। কিন্তু কীভাবে কাজ করছে এই ঘণ্টা? জঙ্গলে এখন হাতির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝেমাঝে তারা চলে আসছে লোকালয়েও। ছাগল চড়াতে বেরিয়ে মুহূর্তে হাতি সামনে চলে আসা মানে বিপত্তি।

ছাগলের গলায় বাঁধা হয়েছে ঘণ্টা। নিজস্ব চিত্র

ছাগলের গলায় বাঁধা হয়েছে ঘণ্টা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৩
Share: Save:

বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা না হয় কঠিন। ছাগলে তো সে সমস্যা নেই। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারতে ছাগলের গলায় ঘণ্টা বাঁধছেন জঙ্গলমহলের অনেকেই।

একই সঙ্গে হাতি এবং ছাগলের খোঁজ পেতে ভরসা এখন ঘণ্টাধ্বনিই। কিন্তু কীভাবে কাজ করছে এই ঘণ্টা? জঙ্গলে এখন হাতির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝেমাঝে তারা চলে আসছে লোকালয়েও। ছাগল চড়াতে বেরিয়ে মুহূর্তে হাতি সামনে চলে আসা মানে বিপত্তি। ছাগলের গলায় ঘণ্টা থাকলে সেই সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। কারণ, হাতি দেখলেই ছাগল দৌড়তে শুরু করে। তখন গলায় বাঁধা ঘণ্টা বাজতে থাকে। ফলে, সকলে আগাম সতর্ক হয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। আবার অনেক সময়ে জঙ্গলের মধ্যে ছাগলের দল হারিয়ে যায়। সহজে খোঁজ মেলে না। ঘণ্টা থাকলে তা হয় না। ঘণ্টার শব্দে বোঝা যায় যে ছাগলের দল ঠিক কোথায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত বেছে নেওয়া হচ্ছে ছাগলের দলের পাণ্ডাকেই। কারণ, তাকেই অনুসরণ দলের বাকিরা।

মেদিনীপুর গ্রামীণের চাঁদড়ার শিরষির জঙ্গলে ছাগল চড়াতে এসেছিলেন ললিতা মাহাতো, বাসন্তী মাহাতোরা। ললিতা বলছিলেন, ‘‘ছাগলের গলায় ঘণ্টা থাকলে অনেক সুবিধে। ছাগল সহজে হারায় না। হারালেও খুব কম সময়ের মধ্যে খোঁজ মেলে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আশেপাশে হাতি দেখলে ছাগল দৌড়য়। ঘণ্টা বাজে। তখন আমরাও সতর্ক হয়ে যাই।’’ বাসন্তী বলছিলেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গলে হাতি বেরোচ্ছে। কিন্তু ছাগল তো চড়াতেই হবে। তাই ঘন্টা থাকলে অনেক সুবিধে।’’ এই ঘণ্টাও আবার ‘দেশীয়’ প্রযুক্তিতে তৈরি! স্টিলের গ্লাসকেই ঘণ্টা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গ্লাসের উপরের দিকে ফুটো করে লোহার ছোট বল জাতীয় কিছু ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

মেদিনীপুর গ্রামীণের মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঞ্জন বেরার কথায়, ‘‘এক সময়ে গরুর গলায় ঘন্টা বাঁধা হত। এখন ছাগলের গলাতেও ঘণ্টা বাঁধা হচ্ছে।’’ জঙ্গলমহলের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বনির্ভর করতে বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। সেই প্রকল্পে ছাগলও বিলি করা হয়। ছাগল পালন করে অনেকে আয়ের পথ সুগম করেন। জঙ্গল নির্ভর প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় চাষাবাদের মরসুম বাদে বাকি সময়ে জঙ্গলের ডালপাতা কিংবা শালপাতা কুড়িয়ে সে সব হাটে বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন আদিবাসী, মূলবাসীরা। সঙ্গে অনেকে পশুপালন করে। ছাগল পালনের ঝোঁক বাড়ছে।

ছাগল থাকলে চড়াতেই হয়। কিন্তু জঙ্গলে আবার রয়েছে হাতির বিপদ। আর এই বিপদের খোঁজ দিচ্ছে ঘণ্টা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bell Goat Elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE