Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদা তুলে হাতির শ্রাদ্ধ, শামিল গোটা গ্রাম 

ঠিক এগারো দিনের মাথায়, সোমবার নিয়ম মেনে মৃত দু’টি হাতির শ্রাদ্ধের আয়োজনও করলেন গ্রামবাসী। পুরোহিত ডেকে চলল পুজোপাঠ। চাঁদা তুলে কয়েকশো লোককে পাত পেড়ে খাওয়ানোর আয়োজনও ছিল।

ভোজ: পাত পেড়ে খাওয়া নেপুরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

ভোজ: পাত পেড়ে খাওয়া নেপুরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

আলু খেতের ধারে নিথর দেহ দু’টো পড়ে থাকতে দেখে শিউরে উঠেছিলেন গ্রামবাসীরা। স্বজনহারানোর শোক নেমে এসেছিল এলাকায়। সজল চোখে দু’জনকে শেষ বিদায় জানিয়েছিল নেপুরা।

ঠিক এগারো দিনের মাথায়, সোমবার নিয়ম মেনে মৃত দু’টি হাতির শ্রাদ্ধের আয়োজনও করলেন গ্রামবাসী। পুরোহিত ডেকে চলল পুজোপাঠ। চাঁদা তুলে কয়েকশো লোককে পাত পেড়ে খাওয়ানোর আয়োজনও ছিল।

হাতিকে ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো করার চল রয়েছে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বছরভর দাঁতালের হানা সামলে দিন গুজরান করা মানুষগুলো হাতি ঠাকুরকে দেখলেই কপালে আঙুল ছোঁয়ান। সেই হাতি ঠাকুরের মৃত্যুতে শ্রাদ্ধের আয়োজন কেন? উদ্যোক্তাদের তরফে মেদিনীপুর গ্রামীণের নেপুরার বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ বলছিলেন, ‘‘হাতি দু’টির আত্মার শান্তি কামনায় আর সকলের মঙ্গল কামনায় এ দিন পুজোপাঠ হয়েছে।’’

গত ১১ জানুয়ারি গভীর রাতে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে দু’টি পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃত্যু হয় নেপুরায়। পরদিন আলু খেতের পাশে হাতির দেহ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসী। সে দিনও বহু মানুষ ভিড় করেছিলেন। কেউ হাতির পায়ের কাছে রেখে গিয়েছিলেন ফুল, কেউ ধূপ জ্বেলে গিয়েছিলেন। গীতা পাঠ করে, পায়ে আলতা, মাথায় সিঁদুর ছুঁইয়ে শেষ বিদায় জানানো হয়েছিল হাতি দু’টিকে। হাতির মৃত্যুতে মকর পরবের আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছিল।

সে দিন যেখানে হাতি দু’টির দেহ মিলেছিল, সোমবার ঠিক সেখানেই শ্রাদ্ধের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে শুরু হয় বিভিন্ন আচার পালন। হাতির মূর্তি কিনে আনা হয়েছিল। দিনক্ষণও বাছা হয়েছিল পঞ্জিকা ঘেঁটে। পুরোহিত চন্দন মিশ্রের কথায়, ‘‘এ দিন ছিল মাঘী পূর্ণিমা। খুব ভাল দিন।’’ গ্রামবাসী কার্তিক বেরা, শঙ্কর ঘোষরা জানালেন, পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলেই সব আয়োজন করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শ্রাদ্ধের আয়োজনে সাহায্য চেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন তাঁরা। কেউ চাল দিয়েছেন, কেউ বা আনাজ। তবে সকলেই কিছু না কিছু দিয়েছেন। খালি হাতে ফেরাননি।

হাতির শ্রাদ্ধে এসেছিলেন সন্ধ্যা ঘোষ। বললেন, ‘‘হাতি অসুস্থ হলে গ্রামের লোকে সেবাযত্নও করে। এ ভাবে দু’টো হাতির মৃত্যুতে আমাদের সকলেরই মন খারাপ। ওদের আত্মা শান্তি পাক, এটুকুই চাই।’’ যে জেলায় এসে রয়্যাল বেঙ্গলকে গণপিটুনিতে খুন হতে হয়েছে, সেখানে এ যেন এক অন্য নজির!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Funeral Elephants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE