জলমগ্ন পুর-হাসপাতাল। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
মহকুমা জুড়ে ক্রমেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে বন্যার ভ্রুকুটি। পরিস্থিতি এমনই যে, জল ঢুকে পড়ায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে পুরসভার হাসপাতালও।
শহর জুড়ে কচুরিপানার দাপটে নাজেহাল ঘাটালের প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা। টানা বৃষ্টিতে ফুঁসছে শিলাবতী এবং কংসাবতী। এর জেরে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ঘাটাল-দাসপুরের বহু গ্রাম। দাসপুরে তলিয়ে যাওয়া যুবকের দেহ সোমবার ঘাটালের শিলাবতী নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার দাসপুরের কল্যাণপুরে মৃতদেহ সৎকার করে ফেরার সময় নদীতে তলিয়ে গিয়েছিলেন সুকুমার পাত্র (৪৬) নামে ওই যুবক।
সোমবার ফের নিম্নচাপের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ঘাটালে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন। সূত্রের খবর, শিলাবতীর জল উপচে দু’দিন আগেই প্লাবিত হয়েছে ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ড। প্লাবিত এলাকাগুলিতে যোগাযোগের উপায় আপাতত নৌকা। শহরের অনেকাংশ জলে ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সাপের আতঙ্কও। ঘাটাল পুরসভার প্রশাসক বিভাস ঘোষ বলেন, “জল না কমলে কচুরিপানা সরানো যাবে না।” পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে জল বাড়ায় ঘাটাল পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে পুর-হাসপাতালটিও জলের তলায় চলে গিয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা। প্রসঙ্গত, এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল এবং জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি নৌকায় চেপে জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
জলমগ্ন পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘাটাল-দাসপুরে বাড়ছে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যাও বাড়ছে। সোমবার ঘাটাল মহকুমায় ১৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘাটাল থানার এক মহিলা পুলিশ কর্মীও রয়েছেন। এই নিয়ে মহকুমায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হল ৯১৮। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩১৪। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার আক্রান্তদের মধ্যে ঘাটালে পাঁচ জন, দাসপুরে সাত জন এবং চন্দ্রকোনায় ছ’জন রয়েছেন। সংক্রমিতদের সবাইকে শালবনি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। অনেকে বাড়িতেই চিকিৎসা করাচ্ছেন। ঘাটাল শহর-সহ বহু গ্রাম জলের তলায়। প্লাবিত এলাকায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে যন্ত্রচালিত নৌকা মজুত রাখা হয়েছে। গ্রামীণ হাসপাতালেও নৌকা রাখা হয়েছে, যাতে আক্রান্তদের বাড়ি থেকে আনতে কোনও সমস্যা না হয়। এ ছাড়াও প্রসূতি মহিলা কিংবা কেউ অসুস্থ হলে ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ টিম তৈরি রাখা হয়েছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর প্রস্তুত। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ঘাটাল ব্লকের আজবনগর ১ ও ২, দেওয়ানচক ১ ও ২, মোহনপুর, মনসুকা-সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জল বাড়ায় ‘ফ্লাড শেল্টার’ গুলিও তৈরি রাখা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রশাসন সতর্ক। প্রয়োজনীয় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy