লন্ডভন্ড: জল জমে ঝাড়গ্রাম শহরের বাজারে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
তিতলির বৃষ্টিতে বেআব্রু প্রতিশ্রুতি।
গত অগস্টে বানভাসি হয়েছিল ঝাড়গ্রাম শহর। তারপরই জেলাশাসক আয়েষা রানি জানিয়েছিলেন, আর যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয় তা পুরসভাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। পুরসভা দিয়েছিল প্রতিশ্রুতি। পুজোর মুখে জল জমবে না অরণ্য শহরে। গত বুধবারও মহকুমা শাসক সুবর্ণ রায়কে দেখা গিয়েছিল, একটি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ তদারকি করতে। কিন্তু তিতলির বৃষ্টিতে সামনে এল, শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার ছবিটা। শুক্রবার ফের বৃষ্টিতে ডুবল ঝাড়গ্রাম শহরের রাস্তা। আর তারপর জেলাশাসক বললেন, ‘‘একাংশ শহরবাসী নর্দমায় জঞ্জাল ফেলছেন। তাঁদেরও সচেতন হতে হবে।’’ আর পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব অবশ্য শহরে জল জমা দেখতে পাননি। তিনি বলছেন, “কোথায় জল জমেছে! সেভাবে জল জমেইনি। বৃষ্টি হলে ওটুকু জল জমে। আবার
নেমেও যায়।”
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এ দিন ভোর থেকে নাগাড়ে দফায় দফায় বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ১১ টা নাগাদ দেখা যায়, শহরের এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক মোড়, পাঁচ মাথার মোড় ও শিব মন্দির মোড়ে মেন রোড ছাপিয়ে নদীর মতো জলের স্রোত বইছে। রাস্তার ধারে কিছু দোকানে জল ঢুকে যায়। আরবিএম স্কুল লাগোয়া শহরের একটি হাইড্রেন উপচে জল বইতে থাকে। রাস্তার উপর জল বইতে থাকায় সমস্যায় পড়েন পথচারী ও সাইকেল আরোহীরা। শহরে পুজোর জন্য অস্থায়ী পোশাকের বাজার বসেছে। সেখানেও জল থইথই অবস্থা হয়ে যায়। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে আউটডোর যাওয়ার রাস্তায় হাঁটুসমান জল জমে যায়। হাসপাতাল মোড় থেকে তেঁতুলতলা মোড় যাওয়ার রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কোথাও দুপুরের পর আবার কোথাও বিকেল জল নামে।
পুরপ্রধান জমা জল দেখতে না পেলেও এ দিন জমা জলে ‘অস্বস্তি’ শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। কারণ, হিসেব মতো আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ পুরভোট হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ভোটের ময়দানে সরব হতে পারে বিরোধীরা। ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএম নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, “পুরোটাই পরিকল্পনার অভাব। শহরের ঢাল অনুযায়ী প্রধান দু’টি নালা আরও বড় করা দরকার। উপ নালা গুলির জল প্রধান নালা দু’টিতে ঠিকমতো প্রবাহিত হতে পারছে না। সব ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জঞ্জাল সংগ্রহ হয় না। তাই একাংশ শহরবাসী নর্দমায় জঞ্জাল ফেলে দেন।’’ পুরসভার আধিকারিকদের একাংশও জানাচ্ছেন, শহরের দক্ষিণপ্রান্ত ও উত্তরপ্রান্তের মধ্যে উচ্চতার প্রায় সত্তর ফুট তারতম্য রয়েছে। দক্ষিণপ্রান্তের জল নেমে আসে উত্তরপ্রান্তে।
তা হলে কি যতবার বৃষ্টি, ততবার শহর ডুববে জলে? জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘শহরের নিকাশির হাল ফেরাতে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা রূপায়ন করা হবে।” পুরপ্রধানও বলছেন, শহরের নিকাশি সমস্যা মেটাতে কার্যকরী পদক্ষেপ করা হচ্ছে। শহরবাসীর প্রশ্ন, সেদিন আর কত দূরে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy