প্রতীকী ছবি
ভূগোল বলছে দুই গ্রাম দুই রাজ্যের বাসিন্দা। পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খণ্ড। আপদে বিপদে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন সকলে। কিন্তু এখন শিয়রে করোনা। তাই বাধ্য হয়েই বন্ধ করতে হয়েছে সীমানা। পড়শিকে করতে হয়েছে পর।
কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে করোনা থেকে বাঁচতে ভিন রাজ্যের সীমানার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে চারমূর্তির গ্রাম। পরিচিতজনকে গ্রামে আসতে মানা করেছিলেন বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু চিরকালের অভ্যাস কি সহজে ছাড়া যায়! কাঁকড়াঝোরের চায়ের দোকানের আড্ডায় প্রায়ই হাজির হতেন পড়শি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের কানিমহুলি, গন্ধনিয়া, হুলুং, ঘটিডোবা গ্রামের লোকজন। ভৌগোলিক সীমারেখায় পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুই প্রান্তের বাসিন্দারা কখনও নিজেদের পর ভাবতে পারেন না। কাঁকড়াঝোর থেকে পাঁচশো মিটার দূরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা। লকডাউনের জেরে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অভ্যাস মতো ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বাসিন্দারা প্রায়ই স্বজন, পড়শিদের খোঁজ নিতে হাজির হচ্ছিলেন কাঁকড়াঝোরে। কিন্তু করোনার জেরে পড়শিদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দারা। বাংলা-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ি পথে বড় বড় পাথর দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়েছেন স্থানীয়েরা। কাঁড়াঝোরের প্রদীপ মাহাতো, ধর্মাল মান্ডিরা বলছেন, ‘‘গ্রামের লোকজনদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ব্যবস্থা।’’
কাঁকড়াঝোরের পাহাড়ি এলাকায় নানা ধরনের আনাজ চাষ হয়। লকডাউনের জেরে যানবাহন চলছে না। কাঁকড়াঝোর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বেলপাহাড়িতে যাওয়া এখন বন্ধ। তাই সাইকেলে আনাজ নিয়ে গিয়ে ঝাড়খণ্ডের বাজারে পাঠাতে হচ্ছে। তাতেও কড়াকড়ি করেছেন কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দারা। সীমানার কাছে ঝাড়খণ্ডের আনাজ পাইকারেরা এসে আনাজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বাসিন্দারা বাজারহাট ও চিকিৎসার প্রয়োজনে ওদলচুয়া কিংবা বেলপাহাড়ির উপর নির্ভরশীল। লকডাউনে যাতায়াতে কড়াকড়ি করায় তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, আমলাশোলের কাছে ঝাড়খণ্ড সীমানায় বিরসাচকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। কিন্তু কাঁকড়াঝোর থেকে ভৈরবথান হয়ে ঘাটশিলা যাওয়ার গ্রামীণ রাস্তায় গ্রামবাসীরাই রাস্তা আটকে নজরদারি করছেন।
ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা সীমানার ৮টি জায়গায় নাকা চেকিং করছে পুলিশ। থাকছে মেডিক্যাল টিমও। গ্রামীণ অনেক এলাকায় দুই রাজ্যের লাগালাগি বিস্তীর্ণ সীমানা রয়েছে। ফলে গ্রামবাসীদেরও সচেতন করা হচ্ছে। জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলছেন, ‘‘গ্রামবাসীদের উদ্যোগে রাস্তা আটকানো বেআইনি। খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy