Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

ফুড কুপনে দুর্নীতি, পথে পরিযায়ীরা

দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর পঞ্চায়েতের দাদপুর গ্রামে পরিযায়ী ফিরেছেন ৮২ জন। অথচ ফুড কুপন পেয়েছেন মাত্র ১৮ জন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০১:৫০
Share: Save:

পূর্ব মেদিনীপুরে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেও পরিযায়ীদের ফুড কুপন বিলি নিয়ে উঠল দুর্নীতির অভিযোগ। জেলায় যে এলাকায় সব থেকে বেশি সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন, সেই দাসপুরেই ফুড কুপন বিলিতে দলবাজির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল। প্রতিকার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ। রাস্তা অবরোধ থেকে পঞ্চায়েত অফিসে ঘেরাও, বিক্ষোভ— সবই চলছে দাসপুরের দু’টি ব্লকে।

দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর পঞ্চায়েতের দাদপুর গ্রামে পরিযায়ী ফিরেছেন ৮২ জন। অথচ ফুড কুপন পেয়েছেন মাত্র ১৮ জন। ওই ব্লকেরই পাঁচবেড়িয়া, খুকুড়দহ, রাজনগর, বাসুদেবপুর প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকায় পরিযায়ী নন, এমন অনেকে ফুড কুপন পেয়ে খাদ্যসামগ্রী তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে কুপন দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে ঘাটালের মহকুমাশাসকের গাড়ি চালকেরও। অভিযোগ, শাসক দলের একাংশের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের জন্যই আবেদন করেও অনেক প্রকৃত পরিযায়ী ফুড কুপন পাননি। বদলে ভুয়ো পরিযায়ীর নামে বরাদ্দ হয়েছে খাদ্য সামগ্রী। এ নিয়ে আসরে নেমেছে বিরোধীরা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক(পঞ্চায়েত) প্রতিমা দাসের বক্তব্য, “তালিকা ধরে সহ পরিযায়ী শ্রমিককে কুপন দেওয়া হয়েছে। সবাই বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহও করেছেন।” অথচ ব্লক প্রশাসনেক পরিসংখ্যান বলছে, দাসপুর-১ ব্লকে ১৫ হাজার এবং দাসপুর-২ ব্লকে ১৬ হাজার, মোট ৩১ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন।অথচ দুই ব্লকে ফুড কুপন বিলি হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। ফলে, চার হাজার পরিযায়ী এমনিতেই তালিকার বাইরে রয়েছেন। আর যাঁরা কুপন পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ভুয়ো পরিযায়ী বলে অভিযোগ।

প্রতি কুপনে দু’মাসে (মে ও জুন) মোট দশ কিলো চাল এবং দু’কিলো ছোলা পাওয়ার কথা। পরিযায়ী হওয়া সত্ত্বেও আবেদনের পরে তা না পেয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ।

গত কয়েকদিনে সাহাচক, জোতঘনশ্যাম, রানিচক, নাড়াজোল, প্রভৃতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিক্ষোভ চলছে। মঙ্গলবারও গোমকপোতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। দাসপুর ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক সৈকত মণ্ডল, বিশ্বনাথ দোলই, নিতাই কুইলাদের আক্ষেপ, “একে কাজের নিরাপত্তা নেই। তার উপর বরাদ্দ হওয়া চালও অন্যরা নিচ্ছেন। তাই রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।”

বিজেপির ঘাটাল জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “পরিযায়ীদের নিয়ে কোথাও সঠিক তথ্য নেই। তালিকা ধরে বিলিবন্টনও হয়নি। ২৭ হাজার কুপনের অন্তত পঞ্চাশ ভাগ উপভোক্তাই প্রকৃত পরিযায়ী নন।” দাসপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুনীল অধিকারীর অভিযোগ, “শাসক দলের অফিসে কুপন লেখা হয়েছে। বিডিওরা সেই কুপন বিলি করছেন। তাই এত সমস্যা।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের দাসপুর-১ ব্লক সভাপতি সুকুমার পাত্রের বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতি হয়েছে বলব না। তবে কুপন বিলিতে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে।”

শ্রীমন্ত মাইতি নামে ঘাটালের মহকুমাশাসকের গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে ওঠা ফুড কুপন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। আবেদনে কী কী তথ্য জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। শ্রীমন্তকে ডিউটিতে আসতে বারণ করা হয়েছে। গাড়ির মালিককেও তা জানানো হয়েছে।

মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।” শ্রীমন্তর ফোন এ দিন বন্ধ ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE