Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভেড়ি ভরতে যত্রতত্র সাব মার্সিবল, জল চুরি রুখবে কে!

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে ভূগর্ভে জলের সঞ্চয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে জল সঞ্চয়ের পাশাপাশি জল অপচয় বন্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ রাজ্যেও জলের অপচয় বন্ধ করতে শুরু হয়েছে প্রচার। কিন্তু সেই প্রচারে কতটা কাজ হয়েছে ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

ভূগর্ভের জলে ভরছে ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র

ভূগর্ভের জলে ভরছে ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না 
ময়না শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০০:১৯
Share: Save:

ভরা বর্ষার মরসুমেও উঁকি দিচ্ছে শরতের আকাশ। বৃষ্টি নামে মাত্রই। ভূগর্ভস্থ জল বাঁচাতে ইতিমধ্যে প্রচার শুরু হলেও অপরিকল্পিত ভাবে রাজ্য জুড়ে যে ভাবে ভূগর্ভের জল তুলে নানা কাজে ব্যবহার হচ্ছে তাতে প্রশাসনের তরফে কোনও নজরদারি নেই।

চাষাবাদ থেকে মাছের ভেড়ি—সর্বত্র অবাধে মাটির নীচের জল তুলে যথেচ্ছ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে গোটা জেলায়। শুধু তাই নয়, মাছের গাড়ির মধ্যে মাছকে বাঁচিয়ে রাখতে যে জল লাগে তাও মাটির নীচ থেকে তুলে বিক্রি চলছে অবাধে। গাড়ি পিছু ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভূগর্ভের জল। জল বিক্রির এমন রমরমা ব্যবসায় ঘরে ঘরে বসে গিয়েছে সাব মার্সিবল পাম্প। পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে এই সব সাব মার্সিবল পাম্প বসানোর ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকায় পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এ ভাবে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ভূগর্ভের জলের ব্যবহারে অচিরেই জেলায় জলের সঙ্কট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা ভূ-বিজ্ঞানীদের।

পূর্ব মেদিনীপুরে মাছ চাষের মডেল ব্লক ময়না। গোটা ময়না জুড়ে অসংখ্য মাছের ভেড়ি। ভেড়ির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গোজিনা, রামচক, বাকচা, তিলখোজা, পরমানন্দপুর, নৈছনপুর প্রভৃতি এলাকায় একরের পর একর মাছের ভেড়ি। জলের জোগান অব্যাহত রাখতে সাধারণত নদী ও খালের কাছাকাছি এলাকায় গড়ে ওঠে ভেড়িগুলি। ভেড়ি এলাকায় জমি দিয়ে ফি বছর মেলে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার লোভে জমি মালিকদের মধ্যে বাড়ছে ভেড়ি তৈরির নেশা। গরমে বেশিরভাগ ভেড়িতেই জল থাকে না। ভেড়ি বাঁচাতে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে চলে জল ভরার কাজ। ময়নার মথুরাপুর, দোনাচক, সুদামপুর, উত্তর চংরাচক, দক্ষিণ চংরাচক প্রভৃতি গ্রামের বেশ কিছু ভেড়ি এলাকায় পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভের জল তুলে ভেড়ি ভরাট করার ছবিও নতুন নয়। ব্লকের গোকুলনগর পঞ্চায়েত এলাকার রাধাবল্লভচক, কাঁচিচক, মথুরিচক, জাগিরচক ইত্যাদি এলাকায় নতুন করে তৈরি হয়েছে ভেড়ি। ওই সব এলাকা নদী থেকে দূরে হওয়ায় ভেড়ি বাঁচাতে ভেড়ির পাশে বসানো হয়েছে একের পর এক সাবমার্সিবল পাম্প। যার মাধ্যমে মাটির নীচ থেকে যথেচ্ছ জল তুলে নেওয়া হচ্ছে ভেড়ির জন্য।

সমস্যার কথা স্বীকার করে রামচক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাগরিকা মাল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের উদ্যোগে আমরা প্রতিটি গ্রাম সংসদ এলাকায় প্রচার চালাচ্ছি যাতে ভূগর্ভস্থ জল তুলে ভেড়িতে না দেওয়া হয়।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি। জেলার প্রত্যেকটি জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহর এলাকাতেও ভূগর্ভস্থ জল অপচয় বন্ধে কি পদক্ষেপ করছে প্রশাসন? পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘পানীয় জলের অপচয় বন্ধে পুর উদ্যোগে প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নতুন করে কোনও সাব মার্সিবল পাম্প বসানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তমলুক পুরসভার মতো নতুন বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Ewe Water Theft Submersible Pump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE