Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছুটি দিল মেডিক্যাল, কয়েক ঘণ্টাতেই প্রসব

প্রসূতির এক পরিজনের প্রশ্ন, “মেদিনীপুরের মতো এত বড় হাসপাতালে পরিষেবার এই অব্যবস্থা হলে জেলার অন্য হাসপাতালগুলো কেমন চলছে তা সহজেই বোঝা যায়!”

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

প্রসূতিকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছুটির কয়েক ঘণ্টা পরই প্রসূতি সন্তান প্রসব করলেন। ঘটনা জেলার সবথেকে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের।

কেন এমন ঘটনা ঘটল? মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “ঠিক কী হয়েছে দেখছি!” হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা মুখে কুলুপ দিয়েছেন। হাসপাতালের অন্য এক কর্তার আশ্বাস, “ঘটনার সবদিক খতিয়ে দেখা হবে।”

প্রসূতির এক পরিজনের প্রশ্ন, “মেদিনীপুরের মতো এত বড় হাসপাতালে পরিষেবার এই অব্যবস্থা হলে জেলার অন্য হাসপাতালগুলো কেমন চলছে তা সহজেই বোঝা যায়!” মঙ্গলবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন মানোয়ারা বিবি। বাড়ি খড়্গপুর গ্রামীণের বসন্তপুরে। প্রসব যন্ত্রণা নিয়েই মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসেছিলেন তিনি। রাতটুকু মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন। বুধবার সকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। প্রসূতি হাসপাতাল ছাড়তে চাননি। জোর করেই ছুটি দেওয়া হয়।

সবদিক দেখে পরিজনেরা অবশ্য প্রসূতিকে নিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। ফের হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে থাকেন। প্রসূতিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গিয়ে দেখান। হাসপাতাল থেকে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রসূতি যখন রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন, সেই সময় ফের তাঁর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। হাসপাতাল চত্বরেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। প্রসূতিকে ওই অবস্থায় দেখে ছুটে আসেন অন্য রোগীর পরিজনেরা। ছুটে আসে হাসপাতাল চত্বরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। প্রসূতি এবং সদ্যোজাতকে ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়।

পরে মানোয়ারা বলেন, “মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। বুধবার সকালে হাসপাতাল থেকে বলা হল, আর ভর্তি থাকার দরকার নেই। ডাক্তার দেখেছিলেন। দেখার পরই হাসপাতাল থেকে ওই কথা জানানো হয়। ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়।” তাঁর কথায়, “ছুটির পরে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। তবে বাড়ি যাইনি। পরিজনেরা ফের আমাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে থাকেন।” হাসপাতালের এক কর্মী বলছিলেন, “ভাগ্যিস ওই প্রসূতি বাড়ি ফেরেননি। না হলে যে কী হত!”

হাসপাতাল সূত্রে খবর, মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ রয়েছে। দু’জনের শারীরিক পরিস্থিতির দিকে নজরও রাখা হয়েছে। বস্তুত, রোগ ধরতে না পারার অভিযোগ মেডিক্যালের বিরুদ্ধে নতুন নয়। সপ্তাহ কয়েক আগেই মেডিক্যালের ইউএসজি সেন্টারে ইউএসজি করিয়েছিলেন এক রোগী। রিপোর্ট দেখে চিকিত্সক জানিয়েছিলেন, সব ঠিক রয়েছে। তেমন ভাবনার কিছু নেই। হাসপাতাল থেকে ছুটিও দেওয়া হয়েছিল রোগীকে।

কয়েক ঘণ্টা পরে সেই রোগীই এক বেসরকারি নার্সিংহোমের ইউএসজি সেন্টারে ইউএসজি করান। রিপোর্ট দেখে নার্সিং হোমের চিকিত্সক জানিয়েছিলেন, অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে। অপারেশন করা প্রয়োজন। শুনে অবাক হয়েছিলেন ওই রোগী।

বুধবারের ঘটনার পরে এক রোগীর পরিজন বলছিলেন, “এরপর কি করে মানুষ সরকারি হাসপাতালের উপর ভরসা রাখবেন? হাসপাতাল তো রোগই ধরতে পারছে না! কেন প্রসূতিকে ছুটি দেওয়া হল, সেই কৈফিয়ত কে দেবেন? যদি অন্য রকম কিছু হত তার দায় কে নিত? সরকারি হাসপাতালের উচিত, পরিষেবার দিকে আরও নজর দেওয়া।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Baby Birth Hospital Leave
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE