Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঘরের কাজের ফাঁকে ফুলের মালা গেঁথেই সংসারের হাল ধরেছেন অপর্ণা, নমিতারা

প্রতিদিন সকালে গৃহস্থালীর কাজের ফাঁকে জুঁই ফুলের মালা গাঁথেন অর্পণা। প্রতিদিনের সেই বিন্দু বিন্দু সঞ্চয় জমে জমে প্রতি মাসে ৪০০-৫০০ টাকায় পৌঁছে যায়। টাকার অঙ্কটা এই পরিবারের কাছে অনেকটাই।

বাড়িতেই চলছে মালা তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতেই চলছে মালা তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০১:৪২
Share: Save:

জমিজমাহীন পরিবারে একমাত্র রোজগেরে, স্বামী অনুপ মেটলা। কিন্তু দিনমজুরির কাজ করে বাবা-মা, স্ত্রী ও ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে পাঁচজনের সংসারের হাল টানতে হিমসিম অবস্থা জয়রামচক গ্রামের বাসিন্দা এই মেটলা পরিবারের। নুন আনতে পান্তা ফুরানো এই সংসারে কিছুটা আশা-ভরসা জুগিয়ে চলেছেন অনুপের স্ত্রী অপর্ণা মেটলা। গ্রামের আটপৌরে মহিলা অপর্ণা মালা গেঁথে বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জন করেন।

প্রতিদিন সকালে গৃহস্থালীর কাজের ফাঁকে জুঁই ফুলের মালা গাঁথেন অর্পণা। প্রতিদিনের সেই বিন্দু বিন্দু সঞ্চয় জমে জমে প্রতি মাসে ৪০০-৫০০ টাকায় পৌঁছে যায়। টাকার অঙ্কটা এই পরিবারের কাছে অনেকটাই। গত পাঁচ বছর ধরে মালা গাঁথার কাজ করছেন তিনি। পরিবারকে কিছুটা হলেও অর্থ সাহায্য করতে পারায় এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের জমিজমা নেই। স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা নেই। স্বামীর রোজগারের উপর সংসার চলে। চোখের সামনেই তো দেখতে পাই, কী হিমসিম অবস্থা হয় ওঁর।’’

শুধু অপর্ণাদেবী নন তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই এলাকার জয়রামচক গ্রামের নমিতা মেটলা, কৃষ্ণা মেটলারাও অপর্ণার মতো পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মালা গাঁথা শুরু করেছেন। খসরেখা গ্রামের রানিবালা জানা, রুনি জানার মতো তরুণীরা প্রতিদিন বাড়ির কাজের ফাঁকে ফুলের মালা গাঁথতে বসেন। কত ধরনের ফুলই তো মেলে এই এলাকায়। জুঁই, রজনীগন্ধা, গাঁদা গোলাপ। আর তাতেই এখন তাঁদের সংসারের হাল অনেকটাই ফিরেছে। তবে এখনও লড়াই অনেকটাই বাকি অপর্ণা, রানিবালাদের। যাঁরা মালা গাঁথেন তাঁদের বাড়ি গেলেই বোঝা যায় দিনে কত লড়াই চালাতে হয়। টালির চাল, কারও মাটির দেওয়াল। কেই শুধু পাকা দেওয়ালটাই তুলতে পেরেছেন। ঘরদোর আগলাতে বাখারির বেড়া দেওয়া। কেউ এক চিলতে ঘরের দাওয়ায়, কেউ উঠোনে বসে মালা গাঁথার কাজ করে চলেছেন। মালা গাঁথার কাজে সাহায্য করেন পরিবারের প্রবীণারাও। সকলে মিলে চেষ্টা না করলে জীবনের লড়াইয়ে জেতা যায় না। এটা ভাল করেই জানেন যে তাঁরা।

পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ব্লকের সীমানা ছাড়িয়ে গাঁদা, জুঁই, গোলাপ, রজনীগন্ধা সহ বিভিন্ন রকম ফুল চাষের চল হয়েছে ছড়িয়েছে পাশের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিভিন্ন গ্রামেও। রূপনারায়ণের তীরবর্তী মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই, কাখরদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ফুল চাষের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে গত কয়েকবছর ধরে।

ফুল চাষের পাশাপাশি ফুলের ব্যবসাও বাড়ছে। কিন্তু এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল ও ফুলের মালা বিক্রি করতে যান বাইরে। ফলে এলাকায় ফুলের মালা তৈরির জন্য ফুল ব্যবসায়ীরা বাড়ির মহিলাদের উপর ভরসা করছেন। তাতেই কাজের সুযোগ বাড়ছে পরিবারের মেয়েদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE