Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফ্যানে গামছার ফাঁস, সেল্‌ফি পোস্ট করে হোটেলের ঘরে ঝুলে পড়ল যুগল, মৃত্যু যুবকের

হোটেলের ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে গামছা। নীচে হাসিমুখে নিজস্বী তুলছেন যুগলে। সেই ছবি ফেসুবকে পোস্ট করার পরেই সুইসাইড নোট-সহ ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল এক যুবকের।

সিলিং ফ্যানে ঝুলছে গামছা।

সিলিং ফ্যানে ঝুলছে গামছা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিঘা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

হোটেলের ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে গামছা। নীচে হাসিমুখে নিজস্বী তুলছেন যুগলে। সেই ছবি ফেসুবকে পোস্ট করার পরেই সুইসাইড নোট-সহ ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল এক যুবকের। পুলিশের দাবি, ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন। আর গামছার ফাঁস ছিঁড়ে যাওয়ায় বেঁচে গিয়েছেন তাঁর সঙ্গী কিশোরী। তদন্তে পুলিশের সামনে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম দীপ নায়েক (২২)। তাঁর বাড়ি হাওড়ার বাগনান থানার মামুর্চির ব্রাহ্মণ ধুকুড়িয়া গ্রামে। দীপ মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দীপ এক কিশোরীর সঙ্গে দিঘায় আসেন। ওই কিশোরী বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা ও জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বছর দেড়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সঙ্গে দীপের পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে বলে দাবি।

নিউ দিঘার যে হোটেলে তাঁরা উঠেছিলেন, সেই হোটেলের মালিক পুলিশকে জানিয়েছেন, দু’জনেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। ৪ ফেব্রুয়ারি দিঘাতেই ঘোরেন তাঁরা। মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ দীপের সঙ্গী ওই কিশোরীর চিৎকারে হোটেল কর্মীদের ঘুম ভাঙে। তাঁদের দাবি, ওই কিশোরী ‘আমার স্বামীকে বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল। ওই ঘর থেকে সিলিং ফ্যানে গামছায় ফাঁস লাগানো দীপের দেহ উদ্ধার হয়। দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা দীপকে মৃত ঘোষণা করেন।

দিঘা উপকূল থানার পুলিশ জানিয়েছে, জামালপুরের ওই ছাত্রী ছাড়াও দেউলটির এক যুবতীর সঙ্গে দীপের সম্পর্ক ছিল। তাঁর পরিবারের দাবি, দীপের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে ওই যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ নিয়ে সালিশি হয়। অভিযোগ, সালিশি সভার চাপে গত ৩১ জানুয়ারি সেই অন্তঃসত্ত্বা যুবতীর সঙ্গে দীপের বিয়ে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে দীপ মোটরবাইকে বাগনান থেকে বর্ধমানে যান। সেখানে জামালপুরের ওই ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বিকেলে এক পিসির বাড়িতে মোটরবাইক রেখে দু’জনে বাসে দিঘায় পৌঁছন।

নিউ দিঘার ওই হোটেলের কর্মীরা এবং পুলিশ সূত্রের খবর, হোটেলের ঘর থেকে সিঁদুর কৌটো, কেক, মদের বোতল এবং দু’টি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, সম্পর্কে টানাপড়েনের জেরেই ওই দু’জন গলায় গামছার ফাঁস দেন। তবে গামছা ছিঁড়ে যাওয়ায় বেঁচে গিয়েছে ওই ছাত্রী। আত্মঘাতী হওয়ার আগে সুইসাইড নোট-সহ নিজেদের একাধিক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন দীপ। সুইসাইড নোটে দীপের দাবি, দেউলটির এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর কয়েক মাস সম্পর্ক ছিল ঠিকই। কিন্তু ওই সন্তান তাঁর নয়।

এ দিন বিকেলে দীপ এবং জামালপুরের ওই ছাত্রীর পরিজনেরা দিঘায় আসেন। ছাত্রীটির বাবা বলেন, “গত ৩ ফেব্রুয়ারি আমার মেয়ে স্কুল গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। পরে বাগনানের এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের কথা জানতে পারি। সোমবার রাতে বাগনানে এসে থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলাম। তবে দীপের আগের বিয়ের কথা মেয়ে জানত না।’’

অন্য দিকে, দীপের সঙ্গে যে যুবতীর বিয়ে হয়েছিল বলে দাবি, তিনি এ দিন বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে আমার সঙ্গে দীপের সম্পর্ক ছিল। আমাদের বৃহস্পতিবার বিয়ে হয়। গত রবিবার মা ডাকছে বলে চলে গিয়েছিল দীপ। ওর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্ক ছিল কি না, জানতাম না।’’

ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। মেয়েটি নাবালিকা হওয়া সত্ত্বেও হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কেন থাকতে দিয়েছিলেন, তার তদন্ত হচ্ছে।’’ যদিও ওই হোটেলের মালিক দীপেন সোম বলেন, “মৃত যুবকের ভোটার পরিচয় পত্র দেখেই হোটেলে থাকতে দেওয়া হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Crime Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE