Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গণনার আগে ভরদুপুরে খুন

মৃত সুদীপ্ত করের (৩০) মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। পরিবারের দাবি, এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। পুলিশও তাই দাবি করেছে।

নিহত সুদীপ্ত কর। নিজস্ব চিত্র

নিহত সুদীপ্ত কর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর ও বেলদা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:১৯
Share: Save:

ভোটের ফল প্রকাশের বাকি একদিন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রেলশহরে ভরদুপুরে দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হলেন এক যুবক।

মৃত সুদীপ্ত করের (৩০) মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। পরিবারের দাবি, এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। পুলিশও তাই দাবি করেছে। যদিও যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘‘এই যুবকের পরিবারের সকলে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তবে এই যুবক ভোটের সময়ে বিজেপির পতাকা বেঁধেছিল। সেই কারণেই খড়্গপুরে যাতায়াত বাড়ছিল। আমার ধারনা টাকাপয়সা নিয়ে বিজেপির লোকেদের সঙ্গে গোলমালে ও খুন হয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘তৃণমূল মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে কোথায় নেমেছে! পুলিশ তদন্ত করুক। খড়্গপুরে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে গুলি চলল এতে তৃণমূলের লজ্জা হওয়া উচিত।’’

বেলদা থানার দাঁতন-২ ব্লকের সাবড়ার বাসিন্দা সুদীপ্ত কখনও নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। আবার কখনও বলতেন আর্থিক সংস্থার কর্মী। আদতে কোন সংস্থায় কোথায় কাজ করতেন তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন পরিজনেরাও। তবে ছেলের সঙ্গে আর্থিক লেন-দেন নিয়ে অনেকের শত্রুতা বাড়ছিল বলে আঁচ করেছিলেন বাবা দিলীপ। তবে সতর্ক করলেও হুঁশ ফেরেনি। দিলীপের কথায়, ‘‘ছেলে কোথায় যাচ্ছে কী করছে কিছুই বলত না। আমাদের কোনও কথা শুনত না। তাহলে আজ এ ঘটনা ঘটত না।’’ সুদীপ্তের মামা সূর্যেন্দু মাইতি বলেন, “এগরাতে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করত। পরে একটি আর্থিক সংস্থায় যোগ দেয়। এদিন কাজের জন্য খড়্গপুরে গিয়েছিল বলে শুনেছি।”

কী ভাবে খুন হলেন সুদীপ্ত সেটাও এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন খড়্গপুরের প্রেমবাজার পেট্রোল পাম্পের অদূরে আইআইটির জি-টাইপ কোয়ার্টারের কাছে সুদীপ্তের রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। পাশে দাঁড় করানো ছিল তাঁর স্কুটি। মাটিতে পড়েছিল হেলমেট। দেহ উদ্ধারের পরে দেখা যায় গলার কাছে গুলি লেগেছে। সুদীপ্তকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান প্রাক্তন আধাসেনা কর্মী তথা আইআইটির মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মী শ্যামল ঘোষ। তিনি বলেন, “আমি কাঁঠাল পাড়ছিলাম। গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছেলে টায়ার ফাটার শব্দ পায়। আমরা ছুটে এসে দেখি যুবক মাটিতে পড়ে রয়েছে। আমি মুখে জল দিই। তার পরে পুলিশের অপেক্ষা না করে দ্রুত একটি অটো দাঁড় করিয়ে ওকে হাসপাতালে পাঠাই।”

এ দিন খড়্গপুর হাসপাতালে এসেছিলেন মৃতের কাকা সাবড়ার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী আশিস কর। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইপো রাজনীতি করত না। এই খুনের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। গোটা ঘটনা নিয়ে আমরা ধন্দে।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “দু’দিনের মধ্যে তদন্তের কিনারা হবে। তবে রাজনৈতিক কোনও যোগ নেই। ব্যক্তিগত কারণে খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।” পরিবার সূত্রের খবর, ইদানীং নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করে দেওয়ার নাম করে অন্যের কাছ থেকে টাকা নিতেন সুদীপ্ত। একটি ঋণ প্রদানকারী আর্থিক সংস্থায় কাজের সূত্রেই খড়্গপুরে যাতায়াত ছিল তাঁর।

গত শনিবার স্ত্রী সুমিতা ও আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে দাঁতনের বড়ায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন সুদীপ্ত। এ দিন সেখান থেকেই খড়্গপুরে এসেছিলেন। এদিন সকাল এগারোটা নাগাদ বাবা-ছেলের কথা হয়। স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছেলেকে বাড়ি চলে আসতে বলেন পেশায় রেলকর্মী দিলীপ। মৃতের শ্যালক সুমন প্রধান বলেন, “সোমবার থেকে লাগাতার জামাইবাবুর ফোন আসছিল। সকালেও ফোন এসেছিল। তার পরে আমাদের বাড়ি থেকেই খড়্গপুরে কাজে আসছে বলে জানিয়েছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE