Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Mecheda

টাকার জন্যই কি খুন! প্রশ্নে স্ত্রীর ভূমিকাও

মেচেদা লোকালের কামরায় মঙ্গলবার রাতে ট্র্যাভেল ব্যাগে মিলেছিল এক প্রৌঢ়ের দেহ। তাঁর পরিচয় সামনে আসার পরে দানা বাঁধল হত্যা-রহস্য।

শোকার্ত স্ত্রী (মাঝে)। ইনসেটে, মৃত হাসান আলি। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত স্ত্রী (মাঝে)। ইনসেটে, মৃত হাসান আলি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৬
Share: Save:

মেচেদা লোকালের কামরায় মঙ্গলবার রাতে ট্র্যাভেল ব্যাগে মিলেছিল এক প্রৌঢ়ের দেহ। তাঁর পরিচয় সামনে আসার পরে দানা বাঁধল হত্যা-রহস্য।

নিহত হাসান আলি (৫৫) কলকাতার বউবাজারের বাসিন্দা। পেশায় আসবাব ব্যবসায়ী হাসানের আদি বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগরে। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-র অভিযোগ, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরেই খুন হয়েছেন স্বামী। যদিও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে গোটা ঘটনায় স্ত্রীর ভূমিকাও প্র‌শ্নের ঊর্ধ্বে থাকছে না।

প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর বছর কুড়ি আগে সারিকা খাতুনকে বিয়ে করেন হাসান। সম্প্রতি নিউ দিঘায় ২১ লক্ষ টাকায় এক বছরের জন্য হোটেল লিজ নেওয়া নিয়ে দালালের মাধ্যমে কথা চলছিল হাসানের। লিজের টাকা বাবদ হোটেল মালিককে ১৫ লক্ষ টাকা মিটিয়েও দিয়েছিলেন তিনি।

গত রবিবার রাতে পাঁশকুড়ায় এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে স্ত্রী সারিকা ও ছেলে আমনকে নিয়ে যান হাসান। তবে রাতে তিনি একাই কলকাতা ফিরে ফেরেন। সোমবার দিঘায় হোটেল লিজের বাকি ৬ লক্ষ টাকা মেটানোর কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সোমবার সকাল দশটার পরই তাঁর মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। রাত পর্যন্ত খবর না পেয়ে পরিজনেরা প্রথমে বউবাজার থানায় যান। পরে পাঁশকুড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। হাসানের দোকানের কর্মী শেখ শাজাহান আলি বলেন, ‘‘সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ হাসান আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমি একটা জায়গায় যাচ্ছি’। রাতে দোকানে এসে দেখা করতে বলেছিল।’’

তার আগেই ট্রেনের কামরায় মেলে হাসানের দেহ। মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ আপ মেচেদা লোকাল মেচেদা স্টেশনে যাত্রীদের নামিয়ে চলে যায় কারশেডে। রাতে ট্রেন পরিষ্কারের সময় রেলের সাফাইকর্মীরা একটি সিটের নীচে লাল ট্রাভেল ব্যাগ দেখতে পান। ব্যাগ থেকে রক্ত চুইঁয়ে পড়ছিল। চেন খুলে ভেতরে মেলে, হাঁটু মোড়া দেহ। দেহ জুড়ে আঘাতের চিহ্ন। বুধবার সমাজমাধ্যমে ছবি দেখে হাসানকে চিনতে পারেন পরিজনেরা। তাঁরাই যোগাযোগ করেন পাঁশকুড়া জিআরপি-তে। পরে তমলুক জেলা হাসপাতালের মর্গে গিয়ে পরিজনেরা হাসানের দেহ শনাক্ত করেন।

পাঁশকুড়া জিআরপি থানার ওসি অসীম পাত্র বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী আমরা নিজেরাই একটি খুনের মামলা দায়ের করেছি। মৃতের পরিবারের তরফে এখনও লিখিত অভিযোগ হয়নি।’’ তবে সারিকা বলছেন, ‘‘৭ মার্চ নিউ দিঘায় হোটেল হস্তান্তরের কথা ছিল। যে চার দালালের মাধ্যমে হোটেল লিজ নিয়েছিলেন, আমার ধারণা ওরাই টাকার জন্য আমার স্বামীকে খুন করেছে।’’ হাসানের শ্যালক সরফরাজেরও বক্তব্য, ‘‘জামাইবাবু রাজু হালদার নামে এক দালালের মাধ্যমে হোটেল মালিককে বকেয়া ছ’লক্ষ টাকা মেটাতে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছে, ওরাই জামাইবাবুকে খুন করেছে।’’ যদিও নিউ দিঘার ওই হোটেলের মালিক রঞ্জন দে-র দাবি, ‘‘সোমবার আমার কাছে হাসানের আসার কথা ছিল না। তবে হোটেল লিজ নিয়ে রাজু হালদার নামে এক দালালের মাধ্যমে হাসানের সঙ্গে কথা হত।’’

সাজাহান জানান, তিনি দোকানে রাজুকে কয়েক বার আসতে দেখেছেন। তবে হোটেল লিজ নিয়ে হাসান তাঁদের কিছু জানাননি। হাসানের প্রথম পক্ষের সন্তান আদিল বলেন, ‘‘সোমবার সকালে বাবাকে ফোন করলে অন্য একজন ফোন ধরে। পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে রাজু, পরে ইকবাল বলে পরিচয় দেয়। তার পরে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করুক।’’

তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে, হাসান-সারিকার সম্পর্কও। বউবাজারের প্রতিবেশীরা জানান, সারিকা গত তিন মাস শিলিগুড়িতে বিউটিশিয়ানের কাজ করছেন। সেখানেই থাকেন। কলকাতায় আসেন খুব কম। হাসানের বন্ধু মহম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘হাসানের অর্থাভাব ছিল না। ওর একমাত্র ছেলে এ বার আইসিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে অনেক চেষ্টা করেও দ্বিতীয় স্ত্রীকে কাছে রাখতে পারেনি ও। এ নিয়ে যন্ত্রণার কথা আমাকে বলত।’’ মামাতো বোন সারিকার সঙ্গে হাসানের সম্পর্ক নিয়ে সরফরাজও বলছেন, ‘‘এটা ঠিক যে তিন মাস ধরে ছেলে, জামাইবাবুকে ফেলে রেখে বোনের চলে যাওয়া উচিত হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE