সেই বাস। নিজস্ব চিত্র
বাস গিয়েছে চুরি।
ডুলুংয়ের বড়ামারা সেতুর ‘হাইট-বার’ ভেঙে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে একটি ফাঁকা বাস। পিছনের চাকায় আগুন ধরে গিয়েছে। সেতু পেরিয়ে একটি খেজুর গাছে ধাক্কা মেরে থামল সেটি। আশপাশ থেকে ছুটে এলেন লোকজন। পাকড়াও করা হল বাসের চালককে। কী হয়েছিল? চোখা চোখা প্রশ্নের সামনে ২৫-২৬ বছর বয়সী বাসচালক অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করেন। তার মধ্যেই খবর এল রগড়া থেকে একটি বাস চুরি হয়েছে। এই বাসটিই সেই বাস।
বাসটির মালিক বেলদার দেউলির বাসিন্দা কাকলি ঘোষাল। খবর পেয়ে তাঁর স্বামী সিদ্ধেশ্বর ঘোষাল বেলিয়াবেড়া থানায় আসেন। তিনি জানান, তাদের বাসটি দশ বছর ধরে খাকুড়দা-রগড়া রুটে চলছে। তাঁর স্ত্রী একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বাসটি কিনেছিলেন। বাস চালিয়ে লাভ না হওয়ায় ঋণের সব কিস্তি এখনও মেটানো সম্ভব হয়নি। তার মধ্যেই এই ঘটনা। তাঁর দাবি, ‘‘বাস কেন চুরির চেষ্টা হল সে নিয়ে আমি অন্ধকারে।’’ তবে থানায় কোনও অভিযোগ করবেন না বলে জানিয়েছেন সিদ্ধেশ্বর। কেন? তাঁর দাবি, ‘‘অভিযোগ করলে সমস্যা অনেক। থানা-কোর্টের ঝামেলা। অনেক ভাড়া ধরা রয়েছে। সেই কারণে ঝামেলায় যেতে চাই না।’’
স্থানীয়রা জানান, খাকুড়দা-রগড়া রুটের ওই বেসরকারি বাসটি খাকুড়দা থেকে বেলদা হয়ে সকাল ১০টা ২৫ মিনিট নাগাদ রগড়ায় পৌঁছয়। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পরে অন্য দিনের মতোই চালক, কনডাক্টর ও খালাসি বাসের মধ্যে চাবি রেখে স্থানীয় একটি দোকানে খেতে যান। তখনই হাওড়ার ওই যুবক বাসে উঠে সেটি দ্রুতগতিতে চালিয়ে লোধাশুলির দিকে চম্পট দেয়। বেলিয়াবড়ার বড়ামারা সেতুর কাছে গিয়েই গোলমাল ঘটে। কারণ ডুলুং নদীর ওপরের সেতুতে ভারী যান চলাচল আটকাতে ‘হাইট-বার’
দেওয়া রয়েছে। সেটা ভেঙেই এগোতে থাকে বাস।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে বাসটি নিয়ে যে পালাচ্ছিল তার মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার বাড়ি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে হলেও মামার বাড়ি বেলিয়াবেড়ার বংশীমোড়ে। কয়েকদিন আগে সে মামার বাড়িতে এসেছিল। তার দাদুকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, রবিবার দাদুর সঙ্গে রগড়া বাজারে গিয়েছিল সে। তারপরে দাদুকে বাড়ি চলে যেতে বলে বাসটি চুরি করে। কিন্তু রগড়া থেকে দশ কিমি দূরে বড়ামারা পর্যন্ত সে কীভাবে বাসটি অক্ষতভাবে চালিয়ে কীভাবে নিয়ে এল সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ওই যুবকের সঙ্গে বাসের মালিক বা কোনও বাস কর্মীর পুরনো কোনও শত্রুতা আছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy