Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মহকুমাভিত্তিক হিসেব রাখার নির্দেশ

উদ্বৃত্ত কেরোসিন বণ্টনের সিদ্ধান্ত

কেরোসিনের কালোবাজারি রুখতে এ বার প্রতি মাসে জেলার বিভিন্ন মহকুমার উদ্বৃত্ত কেরোসিনের হিসেব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিল খাদ্য দফতর। কালোবাজারি রুখতে নজরদারির পাশাপাশি প্রতি মাসের শেষে উদ্বৃত্তের পরিমাণ খতিয়ে দেখা হবে। মহকুমা ভিত্তিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ সঠিক জানার পর সেই পরিমাণ কেরোসিন পরের কোনও একটি সপ্তাহে সাধারণ মানুষের মধ্যে সম হারে বণ্টন করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

কেরোসিনের কালোবাজারি রুখতে এ বার প্রতি মাসে জেলার বিভিন্ন মহকুমার উদ্বৃত্ত কেরোসিনের হিসেব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিল খাদ্য দফতর। কালোবাজারি রুখতে নজরদারির পাশাপাশি প্রতি মাসের শেষে উদ্বৃত্তের পরিমাণ খতিয়ে দেখা হবে। মহকুমা ভিত্তিক উদ্বৃত্তের পরিমাণ সঠিক জানার পর সেই পরিমাণ কেরোসিন পরের কোনও একটি সপ্তাহে সাধারণ মানুষের মধ্যে সম হারে বণ্টন করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “যে সপ্তাহে উদ্বৃত্ত কেরোসিন বণ্টন করা হবে তা আগে থেকে সাধারণ মানুষকে জানিয়েও দেওয়া হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচারও করা হবে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৬১ লক্ষ। সেখানে রেশন কার্ড রয়েছে প্রায় ৬৩ লক্ষ ২৫ হাজার। অর্থাৎ এই হিসেব অনুযায়ী জেলায় প্রায় দু’লক্ষের বেশি ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে। কেরোসিনের কালোবাজারি রুখতে দু’দফায় জেলায় ১৩০ কিলোলিটার কেরোসিনের বরাদ্দ ছাঁটা হয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই জেলায় কেরোসিনের মাসিক বরাদ্দ ছেঁটে করা হয় ৫৬৫৪ কিলোলিটার। বর্তমানে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের জন্য মাথাপিছু প্রতি মাসে ৯০০ মিলিলিটার ও জঙ্গলমহলের বাইরের অংশে মাথাপিছু মাসিক ৮৫০ মিলিলিটার কেরোসিন বরাদ্দ রয়েছে। জঙ্গলমহলের বাইরে খড়্গপুর ও ঘাটাল মহকুমার পাশাপাশি মেদিনীপুর মহকুমার কেশপুর, গড়বেতা-১, ৩ ব্লক-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৪২ লক্ষের বেশি রেশন কার্ড রয়েছে। বাকি রেশন কার্ডগুলি জঙ্গলমহল এলাকার। অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী জেলায় প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষকে মাসে মাথাপিছু ৮৫০ মিলিলিটার কেরোসিন দেওয়া হয়। বাকিদের জন্য বরাদ্দ ৯০০ মিলিলিটার। অর্থাৎ প্রায় ১৮০ কিলোলিটার কেরোসিন প্রতি মাসেই উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা।

খাদ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী, ঝাড়গ্রামে প্রতি মাসে ৪২ কিলোলিটার কেরোসিন উদ্বৃত্ত হবেই। সব থেকে বেশি উদ্বৃত্ত হবে খড়্গপুরে (রেশন কার্ড ভিত্তিক জনসংখ্যা অনুযায়ী)। যার পরিমাণ মাসে প্রায় ৬৪ কিলোলিটার (১ কিলোলিটার অর্থাৎ ১০০০ লিটার)। রেশনে প্রতি লিটার কেরোসিনের দাম ১৫ টাকা ৩১ পয়সা। কিন্তু খোলাবাজারে তা লিটার প্রতি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এই উদ্বৃত্ত কেরোসিনের কালোবাজারি রুখতে প্রতি মাসে মহকুমা ভিত্তিক উদ্বৃত্ত কেরোসিনের হিসাব রাখা হবে।

প্রশ্ন উঠছে, জেলায় এত উদ্বৃত্ত কেরোসিন আসার কারণ কী? খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাদ্দ কেরোসিনের ৩ শতাংশ পর্যন্ত অংশ পরিবহণের সময় বা তেল ঢালার সময় নানা ভাবে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়। তাই বরাদ্দের থেকে বেশি পরিমাণ কেরোসিন আসে। কিন্তু বাস্তবে বরাদ্দের ৩ শতাংশ পর্যন্ত কেরোসিন নষ্ট হওয়া তো প্রায় সম্ভব নয়? যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পার্থপ্রতিমবাবু। জেলায় এত বিপুল সংখ্যক রেশন কার্ড বাজেয়াপ্ত করার জন্যও প্রশাসন কী পদক্ষেপ করছে? জেলা খাদ্য নিয়ামক বলছেন, “ভুয়ো রেশন কার্ড ধরতে প্রতিনিয়ত নজরদারি চলছে। ভুয়ো কার্ড ধরা পড়লেই আমরা কড়া ব্যবস্থা নিই।”

কেরোসিনের কালোবাজারি নিয়ে বিতর্ক জেলায় নতুন নয়। কেরোসিন কেলেঙ্কারি রুখতে খড়্গপুরের এক মহকুমা খাদ্য নিয়ামককে খুন করার অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছিল। সম্প্রতি এই একই কারণে খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমার খাদ্য দফতরের প্রায় সব চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও আধিকারিককে একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে নজিরবিহীন ভাবে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে অবশ্য শুধুমাত্র খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমাতেই উদ্বৃত্ত কেরোসিন আসত। এখন উদ্বৃত্ত কেরোসিন সব মহকুমার মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এখন প্রতি মাসে মহকুমা ভিত্তিক উদ্বৃত্ত কেরোসিনের হিসেব করে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন, সব মানুষকে কেরোসিন বণ্টনের বিষয়ে কীভাবে খবর পৌঁছে দেওয়া যাবে? পার্থপ্রতিমবাবু জানান, সরকারি স্তরে প্রচারের মাধ্যমে আমরা সকলকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব।

দুর্নীতি, সাসপেন্ড এজেন্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর

কেরোসিনে কালোবাজারির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হল এক কেরোসিন এজেন্টকে। বুধবার খড়্গপুরের ওই কেরোসিন এজেন্ট জিএসএন মূর্তিকে সাসপেন্ড করা হয়। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গণবণ্টন ব্যবস্থার কেরোসিন খোলাবাজারে বিক্রির পাশাপাশি ওই এজেন্টদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রায় এক মাস আগে ওঠা ওই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে বুধবার কনজিউমার গুডস-এর ডিরেক্টর দেবব্রত পাল অভিযুক্ত এজেন্টকে সাসপেন্ড করেন। তা জানিয়ে দেওয়া হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়কে। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ামকের সংক্ষিপ্ত জবাব, “ওই এজেন্টকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”

সম্প্রতি খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমার খাদ্য দফতরের আধিকারিক-কর্মীদের বদলির পর প্রশ্ন ওঠে, একাধিক এজেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তাঁদের ছাড়া হবে কেন? প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় সব রেশন ডিলারের কাছেই কিছু ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে। ওই সকল কার্ডের ভিত্তিতে তাঁরা অতিরিক্ত বরাদ্দ পান। উদ্বৃত্ত কেরোসিন চড়া দামে বিক্রি করে লাভও হয় ভালই। তাই দুর্নীতি রুখতে এ বার সব স্তরেই কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE