Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছুটির দিনে পরীক্ষা, ফের বিতর্ক বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যলয়ে

শুক্রবার থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। সে দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণার নোটিস দিলেন কর্তৃপক্ষ! এমনটাই হল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে নোটিসকে ঘিরে শোরগোল পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৫
Share: Save:

শুক্রবার থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। সে দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণার নোটিস দিলেন কর্তৃপক্ষ!

এমনটাই হল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে নোটিসকে ঘিরে শোরগোল পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষা পিছোনোর নোটিস ছাড়াই কী ভাবে ছুটি ঘোষণা করে দিলেন কর্তৃপক্ষ। বিভাগীয় প্রধানেরা ছুটে গেলেন উপাচার্যের কাছে। কথা বললেন রেজিস্ট্রারের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনেই জানিয়ে দিলেন পরীক্ষার বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। অবশেষে ছুটির নোটিসের বয়ান পাল্টে বলা হল, যে বিভাগে পরীক্ষা রয়েছে সেই সব বিভাগ বাদ দিয়ে বাকিদের ছুটি! যা সকলের বিস্ময়কে আরও বাড়িয়ে দিল।

সমাবর্তন বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিতর্ক শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে ঢুকতে না পারা নিয়ে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীরা যাতে সকলে অনুষ্ঠানে না আসতে পারে সে জন্য সকলকে জানানোর ব্যাপারে উদ্যোগী ছিল না কর্তৃপক্ষ। সকলে যাতে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারেন সে জন্য অনেকটা গোপনীয়তা রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ অবশ্য প্রথম থেকেই। এ বারও রীতি মেনে ছুটি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অন্যবার সমাবর্তনের পর দিন থেকে পরীক্ষা শুরু হত না। পরীক্ষার দিন নির্দিষ্ট করা হয় শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই। যা দেখে সমাবর্তনের দিন ঠিক করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা গেল উল্টো। ফলে পরীক্ষা থাকলেও দিয়ে দেওয়া হল ছুটি। পরে পরীক্ষা রয়েছে জানতে পারায় পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ছুটি বাতিল বাকিদের জন্য ছুটির নোটিস দেওয়া হল!

আর তাতেই প্রশ্ন তুললেন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। সমাবর্তন কী তা হলে গুটিকয় আধিকারিকের জন্য? যে শুধু তাঁরাই ছুটি উপভোগ করবেন। বাকিরা কাজ করবেন? রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী এ দিন শুধু বলেন, “যাঁরা এ দিন কাজ করলেন তাঁরা অন্য এক দিন ছুটি নিতে পারবেন।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার থেকে এমএ প্রথম বর্ষের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল আগে থেকেই। সেই পড়ুয়াদের পাশাপাশি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন শিক্ষকেরাও। সব বিভাগেই এ দিন থেকে পরীক্ষা শুরু। শিক্ষকদের কথায়, পরীক্ষা মানেই ছাত্রছাত্রীদের একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকে। এক্ষেত্রে হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করে দিলে ছাত্রছাত্রীদের মনোনিবেশ নষ্ট হতে পারে। তাই ছুটি বাতিলের পক্ষেই সওয়াল করেন প্রায় সব শিক্ষক। পরবর্তীকালে এই ছুটি দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন।

এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, গুটিকয় অফিসার ছুটি উপভোগ করেছেন। পরীক্ষার কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে অন্য কর্মীদেরও এ দিন হাজির থাকতে হয়েছিল। পরীক্ষার জন্য পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরও ছিল খোলা। কেবলমাত্র উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, অর্থ, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ কয়েকটি দফতর বন্ধ ছিল। এই দফতরগুলি ছুটি উপভোগ করলেও কর্মরত শিক্ষক-কর্মীদের তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে ছুটি ঘোষণার ফলে ক্যান্টিন বন্ধ থাকায়। কারণ, বহু শিক্ষক ক্যান্টিনে এসে খাওয়া-দাওয়া করেন, দূর থেকে আসা অনেক ছাত্রছাত্রীরও খাবারের জন্য ভরসা এই ক্যান্টিন। তাঁদের অবশ্য এ দিন খাওয়া জোটেনি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কয়েক’টি দোকান থাকলেও সেখানে ভাত বা রুটির মতো তেমন খাবার থাকে না। সাধারণ টিফিনের উপযোগী কিছু খাবার থাকে।

এমন ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। যদিও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের কথায়, “ভাবতেও অবাক লাগছে পরীক্ষার সময় কর্তৃপক্ষ কী ভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করলেন। পরীক্ষা থাকলে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আধিকারিকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। কিন্তু এখানে উলটপুরাণ। তাঁরা নিশ্চিন্তে ছুটি উপভোগ করছেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medinipur vidyasagar university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE